কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটাটি আট বছরেও উচ্ছেদ হয়নি। বিধি মোতাবেক সিটি কর্পোরেশন এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম নেই। তবে অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা ইটভাটাটি উচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকাও নেই প্রশাসনের। শাহ আমানত সেতু লাগোয়া ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এটিকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তুলছে দুষ্কৃতকারীরা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন’ প্রকল্পের কাজ পায় আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং কর্পোরেশন। প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস নামের স্থানীয় এজেন্ট ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট ড্রেজিং কাজের পাশাপাশি কর্ণফুলীর পাড়ে গড়ে তুলে ইটভাটা।
২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ আলমগীর এবং উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আখন্দ ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে দেখতে পান ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে কর্ণফুলীর তলদেশ থেকে তুলে আনা মাটি ব্যবহার করে পাশের ইটভাটায় ইট নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের টিমটি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ আলমগীর কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর সন্নিকটে ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ, নাব্যতা বিঘ্ন এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে কর্ণফুলী নদী দূষণের অপরাধে প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেন। একই সাথে প্রচলিত আইন অমান্য করে সিটি কর্পোরেশনের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে কিছুদিন ইটভাটার কার্যক্রম চালালেও পরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
২০১২ সালে জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটাটি নির্মাণের জন্য কোনো লাইসেন্স দেওয়া না হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুধুমাত্র পরিবেশ ছাত্রপত্র দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ওই ছাড়পত্রটিও বাতিল করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর ইটভাটাটি উচ্ছেদে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দেন উচ্চ আদালত। জেলা প্রশাসনের তৈরি করা অবৈধ দখলদারের ওই তালিকার একটি হচ্ছে কর্ণফুলী পাড়ের এই ইটভাটা।
এদিকে ইটভাটাটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে ২০১২ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তৎকালীন এক পরিচালকের বিরুদ্ধে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অতিরিক্ত সচিব অরূপ চৌধুরী অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। পরবর্তীতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ইটভাটাটির উচ্ছেদ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমানে ইটভাটাটি পরিত্যক্ত হিসেবে অব্যবহৃত পড়ে থাকলেও এটির চারপাশে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করছে দুষ্কৃতিকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এজেডএম শরীফ হোসেন আজাদীকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যতটুকু জানি কর্ণফুলী পাড়ের পুরনো ওই ইটভাটাটি উচ্ছেদে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বন্দরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বন্দরের এখতিয়ারকৃত অবৈধ দখল উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। কয়েকদিন আগেও মাঝিরঘাটে ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী পরশুও অভিযানের সিডিউল রয়েছে। চলমান কার্যক্রমের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা মোতাবেক অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।