রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চার ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম হাজী সৈয়দ আলী সড়কের শিলক বুচক্র হাট এলাকার দুইশত ফুট অংশ দেবে গেছে। কর্ণফুলী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার শঙ্কা পড়েছে সড়কসহ ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গতকাল বুধবার বিকালে স্থানীয়রা লাল পতাকা টাঙিয়ে এই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। দ্রুত নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা না গেলে যেকোনো সময় সড়ক ধসে পড়ে দুর্ঘটনাসহ শিলক–কোদালার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঝুঁকি এড়াতে সড়কটি জরুরি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিতে সড়কটির শিলক বুচক্র হাট বাজারের পূর্ব পাশে পোস্ট মাস্টার সিদুল বাড়ির কাছে সড়কের একপাশের দুইশো ফুট অংশ দেবে গেছে। সড়কটি নদীর পাড় অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়ায় নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কাপ্তাই প্রজেক্টের পানি ছেড়ে দিলে রাতের মধ্যেই সড়কটি পুরোপুরি ধসে গিয়ে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া নদীপাড়ের কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেগুলো ধসে পড়লে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপদে পড়বে হাজার হাজার গ্রাহক।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নদী ভাঙন রক্ষায় ব্লক স্থাপন করা হলেও মাঝখানে দুইশত মিটার এলাকায় ব্লক স্থাপন করা হয়নি। এই অংশেই নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ হাজী সৈয়দ আলী সড়ক ধসে যেতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙনের এই আশঙ্কার কথা সংশ্লিষ্টদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ছোট এই সমস্যা বর্তমানে বড় আকার ধারণ করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় লিয়াকত আলী জানান, হাজী সৈয়দ আলী সড়কটি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা, শিলক ও কোদালা ইউনিয়নের লাখ লাখ বাসিন্দাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। মাঝেমধ্যে চন্দ্রঘোনা দিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে রাজস্থলী উপজেলা কিংবা বান্দরবান জেলায় যাতায়াতের জন্য এই সড়কটিই একমাত্র ভরসা।
শিলক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকাররম হোসেন চৌধুরী জানান, এই সড়কের পাশেই রয়েছে শিলক হামিদ শরীফ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ, তিনটি কিন্ডারগার্টেন, শিলক ডাউলিং প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিলক প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিলক স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ, শিলক মহিলা মাদ্রাসাসহ কয়েকশত পরিবার। নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে সড়কসহ এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বুচক্র হাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হাসান চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই ২০০ ফুট সড়ক ধসে গেছে। যেকোনো সময় পুরো সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এর ওপর দিয়েই যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচল করছে। তাই দুর্ঘটনা রোধে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিলক ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুন্নবী বলেন, এটি এলজিইডি’র অধীন একটি সড়ক। নদী অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এই দুই দপ্তরের দীর্ঘদিন ধরে ধর্ণা দিয়ে আসছি। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসছে না। এমন কী ব্যক্তি উদ্যোগে এই সড়ক রক্ষায় নদীতে টিনের বেড়া ও বালুর বস্তা দিয়েছি। কিন্তু এতেও এটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। ঝুঁকি এড়াতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছি এবং ফিতা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাশে চিহ্নিত করে দিয়েছি। দ্রুত সংস্কার ব্যবস্থা করা না হলে যেকোনো সময় সড়ক ধসে গিয়ে দুর্ঘটনাসহ এতদ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণ ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। বর্ষা চলে গেলে স্থায়ীভাবে ব্লক স্থাপন করা হবে।