চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের সকল শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, ঠিকানা ও গেজেট নম্বর সম্বলিত তালিকা পরিষদে টাঙানো হয়েছে।
বড়উঠানের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম এ উদ্যোগ গ্রহণ করে ৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নির্দেশনা বাস্তবে রূপ দিলেন। চেয়ারম্যানের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা বেশ আনন্দিত।
গতকাল (১১ জুলাই) বিকেলে উপজেলার ২ নং বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা উত্তোলন করেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাদুল হক।
জানা যায়, ৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদে নিজ নিজ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-ঠিকানা খোদাই করে টাঙানো হবে।’
‘একইভাবে প্রত্যেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ওই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে জেলার সব মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা লেখা থাকবে। তেমনটি একাত্তর সালের রাজাকার, আলবদর, আল শামসদেরও নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হবে।’
তথ্যমতে, কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে মোট মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ৭১ জন। তারমধ্যে বড়উঠান ইউনিয়নে রয়েছে ৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এরা হলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবুল হাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বাঙালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর সত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুছা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাদুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জমির, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুর মোহাম্মদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পিসি গোলাম শরীফ।
আরো রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খাঁন,
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এখলাছুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মো. মোহামুদুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেন্দ্র দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা পবন দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শুক্কুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম।
এই মহান বীর সন্তানদের স্থায়ী ঠিকানা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কতৃক দেওয়া গেজেট নম্বর তালিকায় সংযুক্ত রেখে টাঙানো হলো। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিত আবার অনেকেই প্রয়াত। এটা নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে। সেজন্য সকল তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত সন্তান মো. মনির উদ্দিন বলেন, ‘বড়উঠান ইউনিয়নে মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা উত্তোলন দেখে আমরাও গর্ববোধ করছি। কর্ণফুলীর প্রতিটি ইউনিয়নে যেন স্ব স্ব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা উত্তোলন করা হয়। সে প্রত্যাশা রেখে বড়উঠানের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য।’
এ প্রসঙ্গে বড়উঠানের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অকুতোভয়ের ফলেই আজকে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ পেয়েছি।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সারাদেশের মতো বড়উঠানের মুক্তিযোদ্ধারাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের সকল ধরণের সহযোগিতা ও ভাতা প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই পরিষদে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা উত্তোলন করতে পেরে সবার মতো আমিও গর্বিত। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা দেখে আগামী প্রজম্ম যেন উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।’