কর্ণফুলীর তীরে শুঁটকি শ্রমিকদের ব্যস্ততা

চট্টগ্রাম থেকে বছরে চাহিদা ৪০ হাজার টন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের রসনা বিলাসিদের রসনায় শুঁটকি একটি জনপ্রিয় খাবার। শুঁটকি বললেই অনেকেরই জিভে আসে জল। আর সেটি যদি হয় চট্টগ্রামের শুঁটকি তাহলে তো কথাই নেই। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এই শুঁটকি। চট্টগ্রামের শুঁটকির জনপ্রিয়তা সারা দেশে। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম শুঁটকিপল্লী।

কর্ণফুলী নদীর উত্তরে বাকলিয়া এবং দক্ষিণে ইছানগর, জুলধা, ডাঙারচর ও কর্ণফুলী ঘাট এলাকায় শুঁটকি মাছের ব্যবসা করে শতবছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতি বছর হালকা শীতে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়ে যায় চট্টগ্রামের শুঁটকি পল্লী গুলোতে। আর এখন পুরোদমে শুঁটকির মৌসুম। তাই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে শুঁটকি শ্রমিকদের এখন চলছে শুঁটকি শুকানোর ব্যস্ততা।

গতকাল বাকলিয়া আবদুল্লাহ আল নোমান কলেজের একটু পরে গিয়ে দেখা যায়, ধুম পড়েছে নানা প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদনের। প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিকরা। কর্ণফুলীর তীরে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার উপর কাঁচা মাছ পাতলা করে বিছিয়ে সূর্যের তাপে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। সূর্যের তাপে ৫/৬ দিনের মধ্যেই কাঁচা মাছ শুকিয়ে গিয়ে শুঁটকিতে পরিণত হয় বলে জানান কর্মরত শ্রমিকরা।

এখানকার শুঁটকি আঞ্চলিক সীমা ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। শীতকালে বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়। চাহিদাও এই সময় বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রামের শুঁটকি দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বিপুল সম্ভবনাময় এই খাতের দিকে কারো নজর নেই বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। শুঁটকি ব্যবসায়ী এনাম জানান, নভেম্বরের শুরুতে কদর বেশি থাকে ছোট জাতের শুঁটকির। আর বড় শুঁটকির মৌসুম শুরু হয় বেশি শীতে। শীতকালে বাতাসে আদ্রর্তা কম থাকায় দ্রুত শুকায় শুঁটকি। এজন্য বছরের এ সময়ে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে শুরুহয় শুঁটকি তৈরির উৎসব।

চট্টগ্রাম মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ৪০ থেকে ৪৫ প্রজাতির মাছকে শুঁটকি তৈরি করা হতো এক সময়। এখন অনেক কমে এসেছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামে যেসব শুঁটকি উৎপাদন হয়, তার মধ্যে রয়েছে ফাইশ্যা, ছুরি, লইট্যা, ইচা, মইল্যা, কেচকি, লাক্কা, রূপচাঁদা, পোপা, মিশালী, মাইট্যা, চোফি, মনুনিয়া, লবণ ইলিশ উল্লেখযোগ্য।

শুঁটকির মধ্যে সবচেয়ে দামি লাক্ষা ও রূপচাঁদা। তবে এখানে লাক্ষা একেবারে কম হয়। তবে শুঁটকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের ক্যান্সার বিভাগের চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, পোকা মাকড় থেকে রক্ষা এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য এসব শুঁটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক। যা স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর খুবই ক্ষতিকর।

শুঁটকিতে ডিডিটি পাউডারসহ নানা কৃত্রিম রাসায়নিক মিশাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রকার পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে শুঁটকিতে ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করা হলেও এতে শুঁটকির গুণগত মান ও স্বাদ উভয়টা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া একসময় খোলা মাঠে শুকিয়ে এখানে শুঁটকি করা হতো। এতে করে শ্রমিকের মজুরি বেশি লাগার পাশাপাশি শুকাতে বেশি সময় লাগলেও স্বাদ অনেক ভালো হতো।

শুটকি ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জে শুঁটকির ৪০টি আড়ত রয়েছে। ছোটবড় দোকান রয়েছে ২৭০টির মতো। সেখানেই চট্টগ্রামে ও কঙবাজারের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রির জন্য চলে আসে।

প্রতি মৌসুমে চট্টগ্রামের এসব শুঁটকি আড়তে মাছের গুঁড়াসহ ৩০ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে
পরবর্তী নিবন্ধমুরগি ও ডিমের দাম আরো বেড়েছে