কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার ভালো ফল আনবে না

ভূমিসেবা সপ্তাহ উদ্বোধনে শিক্ষামন্ত্রী । নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে কক্সবাজারে । মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু মানুষের উষ্মা দুঃখজনক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি হবে সে রকম কোনো কাজ যাতে আমরা না করি। কেউ যদি পরিকল্পনা করে থাকে, নদীর মধ্যবর্তী জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে, সেটা কখনোই নদীর জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে বলে আমি মনে করি না। আমি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলব। সারা বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি থাকে কর্ণফুলী নদীর ওপরে। সেই কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে চরে বর্জ্য ফেলা হবে, বর্জ্য থেকে কী করা হবে, সেটা পরিবেশের জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। তবে আমার মনে হয়, এটা পরিবেশের দিক থেকে কখনই যথাযথ হতে পারে না। বিশেষ করে নদীর ব্যবস্থাপনা ও নদীর পানির বিশুদ্ধতা, সেটা দূষণমুক্ত রাখা এবং নদী চলাচলের উপযুক্ত রাখা। সে বিষয়ে শুধু নির্বাহী বিভাগ নয়, বিচার বিভাগ থেকেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদীর প্রাণ আছে। সেভাবেই আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে আমরা নদীকে সম্মান করি।

গতকাল শনিবার নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম হলে সপ্তাহব্যাপী ভূমিসেবা সপ্তাহ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর চর বাকলিয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য শোধনাগার করতে চাইছে। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে সপ্তাহব্যাপী ভূমিসেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর তিনি বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। পিতামাতা ও পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদভাবে থাকার জন্য বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও বান্দরবান মিলিয়ে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতির জন্য আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কঙবাজারে সেই বিশ্ববিদ্যালয় যাতে হয়। তাহলে আমাদের কঙবাজার জেলা, বান্দরবান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে পারবে। সেভাবে জায়গাটা নির্ধারণ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে কঙবাজারে।

চলমান কোটা বিতর্ক বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে এই বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন আমাদেরকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের যে পরবর্তী প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন বলে আমরা ধারণা করে থাকি, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার বিষয়টা ছিল। সেটা যথাযথভাবে পালনের জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে অমনোযোগিতা হয়েছে, অনেক জায়গায় সেটাকে মান্য করা হচ্ছে না। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটা নির্দেশনা এসেছে। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাব, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি এবং নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন। যেহেতু আদালতের রায় এখনো সুনির্দিষ্টভাবে আমার হাতে আসেনি বা পড়ে দেখতে পারিনি, তাই সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করছি না।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার প্রশ্নে কিছু মানুষের উষ্মা খুবই দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় ও নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট পদ্ধতিতে ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্তভাবে জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অন্যতম ক্ষেত্র।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আহম্মেদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ ও জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউসুফ হাসান।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী অর্থাৎ আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিসেবা সপ্তাহ উদযাপিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলাসহ বিভাগের ১১টি জেলার ১০৩টি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্কেল ভূমি অফিস ও সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ভূমি সেবা সপ্তাহ২০২৪ উদ্বোধন হয়েছে। ‘স্মার্ট ভূমিসেবা, স্মার্ট নাগরিক’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে আয়োজিত ভূমিসেবা সপ্তাহে চট্টগ্রামে ১০টি স্টলের মাধ্যমে আগত সেবা প্রার্থীদের সেবা প্রদান করা হবে। ১০টি স্টলের মধ্যে ৬টি স্টলে মহানগরের ৬টি সার্কেল ভূমি অফিসের ভূমি বিষয়ক যাবতীয় সেবা প্রদান, ১টি স্টলের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেবা প্রদান, ১টি স্টলের মাধ্যমে রেকর্ড রুমের খতিয়ান সরবরাহ সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ১টি স্টলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস এবং অপর ১টি স্টলে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস কর্তৃক আগত সেবা প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রকার ভূমি বিষয়ক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া নগরীর ৬টি সার্কেল ভূমি অফিসসহ সকল উপজেলা ভূমি অফিসের পৃথক স্টল স্থাপনের মাধ্যমে ভূমিসেবা পাবেন সেবাপ্রার্থীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বিষয়ে অংশ না নিয়েও জিপিএ-৫ পেল দুই ছাত্রী
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিক নেতাকে সংবর্ধনা, বন্দরের কার্যক্রম তিনঘণ্টা ব্যাহত