কর্ণফুলী নদীর একটি বাঁক কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়ানোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাঁক না থাকায় শুধুমাত্র পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি) বড় জাহাজ ভিড়ানো যাবে। বন্দরের চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) বড় জাহাজ ভিড়ানোর ক্ষেত্র সংকুচিত করা হয়েছে। সম্প্রতি জারি করা ড্রাফট চার্টসহ এক সার্কুলারে এই ঘোষণা আসার পর বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটিসহ মূল জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়ানোর স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১৩৫ বছর পর উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়ানো হয় নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল বন্দরের যাত্রা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ড্রাফট এবং ল্যান্থের জাহাজ ভিড়ানো হতো বন্দরে। সত্তরে দশকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬০ মিটার লম্বা এবং ৭.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো হতো। ১৯৮০ সালে এসে প্রথম ১৭০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে এসে ড্রাফট না বাড়িয়ে ল্যান্থ বাড়িয়ে ১৮০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেওয়া শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে ভিড়ানো হয় ১৮৬ মিটার লম্বা এবং ৯.২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। ২০১৪ সালে বার্থিং দেওয়া হয় ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ।
প্রায় দশ বছর পর ২০২৩ সালে এসে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। এতে করে ব্যবসায়ী– শিল্পপতিরা উচ্ছ্বসিত হন। তারা বলেন, এতদিন যে ধরনের জাহাজ ভিড়ানো হতো শিপিং বাণিজ্যে সেগুলোকে মাঝারি আকৃতির জাহাজ বলা হয়। ১৯০ মিটার লম্বা বা ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজে ২২শ থেকে ২৬শ টিইউএএস কন্টেনার বোঝাই করা যায়। আধা মিটার ড্রাফট বৃদ্ধি এবং ১০ মিটার ল্যান্থ বৃদ্ধি করে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার ল্যান্থের জাহাজে ৩৮শ টিইইউএস পর্যন্ত কন্টেনার বোঝাই করা যায়। ১০ মিটার ল্যান্থ বাড়ার কারণে গড়ে ১ হাজার কন্টেনার বাড়তি পণ্য বোঝাই করার সুযোগ তৈরি করবে। তবে সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা ড্রাফট চার্ট এবং সার্কুলার অনুযায়ী শুধুমাত্র পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো যাবে। এই টার্মিনাল এখনো চালু হয়নি। এখানে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া সিসিটি, এনসিটি এবং মূল জেটিগুলোতে ২০০ মিটার লম্বা হলে ৯ মিটার ড্রাফট, ১৯৫ মিটার লম্বা হলে ৯.৫ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা হলে কেবল ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। তা–ও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গুপ্তাছড়া বাঁকের জন্য বন্দরে বড় জাহাজ আনতে সমস্যা হয়। নেভাল ঘাঁটিসহ বিভিন্ন কারণে বাঁকটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে থাকলেও বাঁকের কারণে ১০ মিটার ড্রাফটের ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো সহজ হচ্ছে না।