চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহার মৌলানা মোহাম্মদ আলী সড়কের কাজ প্রায় পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু সে সড়কের ঠিক মাঝখানে রয়েছে বিদ্যুতের লম্বা খুঁটি। এ অবস্থায় চরলক্ষ্যা শিকলবাহা খালের উপর সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
যদিও সে সময় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিতরণ বিভাগের কাজটি বাস্তবায়নকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রমা এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে একাধিকবার মইজ্জ্যারটেক পিডিবি অফিসে লিখিত আবেদন দিলেও আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ ঠিকাদারের। এর ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে যাত্রী ও যানবাহন।
স্থানীয়রা বলেন, শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যার গ্রামের ৮-১০ হাজার মানুষ যেন সহজে কলেজ বাজার ও আলী হোসেন মার্কট, থানা এলাকাসহ স্ব স্ব ইউপি কার্যালয়ে যাতায়াত করতে পারে, এ সুবিধার জন্য ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৫ টাকা ব্যয়ে সড়কের মুখে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়।
তবে কালভার্টের কাজ শেষ হলেও সড়কের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়ে গেছে। পিডিবির গাফিলতিতে ঠিকাদার বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরিয়ে কাজ শেষ করে চলে গেছেন। এর ফলে লোকজন ও যানবাহন চালকদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। কিন্তু ভ্রুক্ষেপহীন পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।
ওই এলাকার ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চালক মফিজ বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করতে হয়। সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকার কারণে দিনে গাড়ি চালানো গেলেও রাতে তা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকলে দুর্ঘটনার ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। খুঁটিতে ধাক্কা লেগে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এটি সরানো দরকার।’
একই এলাকার আবুল হোসেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করে। বাড়ি ঘরে বাজার বা খামারের মালামাল নিয়ে বড় গাড়ি আসতে পারে না। এছাড়াও একাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো দ্রুত সরিয়ে নিলে তাঁরা শঙ্কামুক্ত হবেন।
শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দ্রুত খুঁটিটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’
রমা এন্টারপ্রাইজ এর ঠিকাদার দেবরাজ রতন জানান, ‘একটি পিডিবির ও আরেকটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুটি ১১ হাজার ও ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে কাজ করা কঠিন ছিলো। দুটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। কিন্তু কোন বিদ্যুৎ অফিস কোনো তৎপরতা দেখাননি। এ ছাড়া দরপত্রে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দও ছিল না। তাই যেখানের খুঁটি, সেখানে রেখেই কাজ শেষ করতে হয়েছে।’
ঠিকাদার আরো বলেন, ‘কালভার্টের কাজ করার সময় আমি নিজ থেকে ২০ হাজার টাকা দেবো বলেছিলাম খুঁটি সরাতে। কিন্তু তাঁরা সে সময় লাখ- দেড় লাখ টাকা চেয়েছিলো। তা দিতে পারিনি বলে সরায়নি।’
শিকলবাহা ফিডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি বদলি হয়ে গেছি হাটহাজারীতে। নতুন কাউকে শিকলবাহার দায়িত্ব দিছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পিডিবির কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক উপ-কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোন মন্তব্য করতে করেনি তিনি।
এ প্রসঙ্গে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন,’ আমি জানি না বিষয়টি। ৫ বছর আগে আমি ছিলাম না। পিডিবির কে টাকা চেয়েছে সেটা জানি না। আপনি এখন জানালেন। খোঁজ খবর নেবো। তারপর ব্যবস্থা নেবো। এলাকার লোকজন বা মেম্বারকে প্রকৌশলী প্রণয় বা নুরুল ইসলাম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত বলেন, ‘এলাকার লোকজন পটিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সাথে যোগাযোগ করতে পারে। খুঁটি সরিয়ে দেবে। প্রয়োজনে ভুক্তভোগীরা আমাকে ফোন করতে পারে।’