চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটায় মো. শহিদুল আলম জুয়েল (৩২) নামে এক যুবককে অপহরণের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিএনপি, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলায় আরও ১৩-১৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) কর্ণফুলী থানায় ভুক্তভোগী জুয়েল নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার নম্বর-০৮। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ।
অভিযুক্তরা হলেন— কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এম মঈন উদ্দিন (৪৬), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. শাহেদুর রহমান (৫০), ব্যবসায়ী মির্জা আজাদ (৪০), সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক (৪০), সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদ (৫৮), চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমরান পাটোয়ারী (২৯), ব্যবসায়ী আব্দুর শুকুর (৩৫) ও ব্যবসায়ী জহিরুল আলম (৪০)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৩-১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে জুয়েল উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে তিনি ইছানগর জামে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে চরপাথরঘাটার সাইক্লোন সেন্টারের কাছে পৌঁছালে, তিনটি সিএনজিযোগে অজ্ঞাত ৯-১০ জন এসে দাবি করে যে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। জুয়েলকে তারা ছাত্র পরিচয় দেন।
এরপর তারা তাকে জোরপূর্বক সিএনজিতে তুলে নেয়। কিন্তু থানায় না নিয়ে, তাকে শাহ আমানত সেতু হয়ে ফিশারি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি কালো প্রাইভেট কারে করে লালদীঘির মাঠে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিছুক্ষণ পর, মাস্ক পরিহিত ৯-১০ জন লোক তাকে আরও চারজনের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর একটি সাদা প্রাইভেট কারে তাকে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়।
রাত সাড়ে ১টার দিকে, গাড়িটি কাজীর দেউড়ীর রয়েল হাট রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ায়। সেখানে মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিরা জুয়েলকে গাড়ির মধ্যে রেখে দরজা লক করে দেয়। ৩০ মিনিট পর, তারা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। জুয়েল ১০ লাখ টাকা দিতে অপারগতা জানালে, তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে, মাস্ক পরা ৪ জন লোক জুয়েলের মোবাইল ফোন থেকে সাজ্জাদ নামের একজনের নম্বরে কল করে তার ছোট ভাই মুন্নার সঙ্গে কথা বলেন এবং ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে, ৩ লাখ টাকা হলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যা ভিকটিম জুয়েল বারবার তার পিতাকে মুঠোফোনে জানান বলে উল্লেখ করেছেন।
তার কিছুক্ষণ পর, কর্ণফুলী থানার ওসি ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা কাজীর দেউড়ী মোড়ে গাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে মাস্ক পরা ৪ জন বলেন, ‘টাকা লাগবে না, আমরা তোমাকে ছেড়ে দেবো, চিৎকার করো না।’ এরপর, তারা গাড়িটি ঘুরিয়ে হল টোয়েন্টিফোর এর সামনে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে, জুয়েলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং নামার সময় তারা বলেন, এজাহারে উল্লেখ করা আসামিরা তাদেরকে প্ররোচিত করেছে তাকে এনে টাকা আদায় করার জন্য।
পরে, জুয়েল একটি রিকশায় করে কোতোয়ালী থানায় গিয়ে ওসি কোতোয়ালী ও সেখানে উপস্থিত ওসি কর্ণফুলীকে ঘটনার বিস্তারিত জানান।
এ বিষয়ে, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’