চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হামলা, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দুমাস ধরে কর্ণফুলীতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে নানা অপরাধ। বিশেষ করে মইজ্জ্যারটেক, কলেজবাজার, শিকলবাহার ৩, ৪ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড, শাহমীরপুর, ফকিরন্নিহাট, জুলধা ডাঙারচর, পাইপের ঘোড়া, ডায়মন্ড রোড, খোয়াজনগর ৪ নম্বর ওয়ার্ড, চরপাথরঘাটা নতুন ব্রিজের নিচেসহ ইত্যাদি স্পটে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
পুলিশ বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কারণ সরাসরি অভিযোগ করলেও আসামিদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এরমধ্যে শিকলবাহায় পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতি ও খোয়াজনগরে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় জনগণ বিব্রত। এ অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় কর্ণফুলীবাসী নিরাপত্তার দাবিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
সাধারণ লোকজনের দাবি, কর্ণফুলীর পাঁচ ইউনিয়নে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কমছে না। রাতে তো আছেই, দিনে-দুপুরেও হচ্ছে চুরি-ছিনতাই। আর এতে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের শিথিলতায় বাড়ছে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই। কয়েক মাস ধরেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। আতঙ্কের নাম ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টার সময় কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর রুহুল মুকাররবীন দরবারে সোয়াদিকীন শরীফে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয়ে বাসায় ঢুকে লাখ লাখ টাকা ও গহনা লুটে নিয়েছে একদল ডাকাত। এরপর শিকলবাহা গরুর খামারে পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতি ঘটে।
এছাড়াও মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় চলন্ত বাসে নারীকে গণধর্ষণ, শিকলবাহা স্কুল শিক্ষিকাকে বাসায় প্রবেশ করে জোরপুর্বক ধর্ষণ চেষ্টা, মইজ্জ্যারটেক আবাসিকে মলম ছিটিয়ে সিএনজি আটকে যাত্রীর টাকা পয়সা মোবাইল ছিনতাই, কলেজ বাজার সড়কে গাড়ি আটকে ডাকাতি, চলন্ত ট্রাক হতে মালামাল লুট, নতুন ব্রিজ থেকে যাত্রী সেজে সিএনজি আটকে ডাকাতি।
শুধু কি তাই এছাড়াও ফকিরন্নিরহাট রাস্তার মাথায় ডাকাতি, শিকলবাহা ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোবাইল ছিনতাই ও চুরি, গাছের ফলমূলও ডাব নারকেল চুরি, কৃষি খামারে লুটপাট, শিকলবাহার বাংলা পাড়ায় তরুণীকে ধর্ষণ, সেভেন রিং সিমেন্টে যন্ত্রপাতি চুরি, খোয়াজনগর ৪ নম্বর এলাকায় চুরি মেরে টাকা ছিনতাই ও ডাকাতি, চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট বাজারে চুরিসহ অসংখ্য ঘটনায় জনমনে ভয়ভীতি বাড়ছে। দ্রুত এসব স্পটে পুলিশের টহল জোরদার করা জরুরি বলে স্থানীয়দের দাবি।
যদিও কর্ণফুলী পুলিশ অবশ্য বলছে ৫ অগাস্টে বিগত সরকারের বিদায়ের পর ব্যাপক হামলা, বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় কেউ কেউ সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছেন। কিন্তু তারা মনে করছেন পুলিশ বাহিনী ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং পুলিশি কার্যক্রম সচল। যদিও সাধারণ মানুষ বলছেন, পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভাবে রয়েছে। তারা কোন ধরনের অপারেশন ভূমিকায় নেই। ৯৯৯ কল ছাড়া সহজে আগাচ্ছে না পুলিশ।
থানা পুলিশের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে গত সেপ্টেম্বর মাসে কর্ণফুলী থানায় মোট মামলা হয়েছে ৫৪ টি। এরমধ্যে ২৬ টি মাদক মামলা, ৭টি চুরি মামলা, ১১টি মারামারিসহ অন্যান্য, ডাকাতি ২টি, প্রতারণা ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২টি, খুন ১টি, দস্যুতা ২টি, সড়ক দুর্ঘটনায় ২টি।
এছাড়াও চলমান ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ৩৬ টি। এরমধ্যে মাদক মামলা ১২টি, চুরি ৭টি, মারামারিসহ অন্যান্য ৭টি, প্রতারণা ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৬টি, দস্যুতা ১টি, সড়ক দুর্ঘটনা ১টি, মৎস্য ১টি। এছাড়াও গত দুই মাসে ভুক্তভোগীদের অর্ধশতাধিক সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেই অপরাধ চক্রগুলো সুযোগ নিচ্ছে। আবার নতুন করে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার ভয়েও অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে পুলিশ। এ বিষয়ে মাঠে দ্রুত বিট পুলিশিং কার্যক্রম বাড়ানো দরকার এবং রাতে টহল টিম বৃদ্ধি করা জরুরী।’
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, ‘চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় মাঠে কাজ করতেছে। যেকোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সহযোগিতা অবশ্য দরকার।’
এ প্রসঙ্গে সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেছেন, ‘পুলিশের কাজের সক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের সহযোগিতায় পুলিশ জনবান্ধব হতে পারে সহজেই।’