কর্ণফুলীতে কথিত ‘সমন্বয়ক’কে পিটিয়ে থানায় অবরুদ্ধ বিএনপি নেতা! এরপর যা ঘটলো

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে কথিত সমন্বয়ক সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মো. সালা উদ্দিন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সেলিম রেজা কয়েকদিন আগে হুমকির অভিযোগে ডাঙারচর নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেই জিডির তদন্ত সংক্রান্ত বৈঠকে গেলে সেখানে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে বিএনপি নেতা সালা উদ্দিন থানায় গেলে সেলিম রেজার অনুসারীরা থানায় উপস্থিত হয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

জানা যায়, ৮ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টায় ডাঙারচর নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে বৈঠকে বসেন দুই পক্ষ। বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আব্দুল হালিমের উপস্থিতিতেই হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেলিম রেজা গুরুতর আহত হন এবং অপর পক্ষের একজন জকিরও আঘাত পান। ঘটনার পর সেলিম রেজাকে থানা নিয়ে গেলে সেখানে পুনরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সেলিম রেজা নৌ তদন্ত কেন্দ্র থেকে থানায় আসার পর বিএনপি নেতা সালা উদ্দিনও থানায় উপস্থিত হন। খবর পেয়ে সেলিমের অনুসারীরা থানায় গিয়ে সালা উদ্দিনকে লক্ষ্য করে ব্যাপক গালিগালাজ করে এবং প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। থানা পুলিশের উপস্থিতিতেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি অধিকাংশ পুলিশ সদস্যকে।

ঘটনার সূত্রপাত মূলত কিছু জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত বিষয়ে। কর্ণফুলীর জুলধায় অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে সেলিম রেজার পৈতৃক সম্পত্তির কিছু অংশ অধিগ্রহণ হয়। সেই সংক্রান্ত পাওনা টাকা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে সেলিম রেজার সঙ্গে বিএনপি নেতা সালা উদ্দিনের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ থেকেই হুমকির অভিযোগ উঠে এবং পরবর্তীতে জিডি করা হয়।

জিডি নম্বর ১০২৬ অনুযায়ী জিডির তদন্তে নিয়োজিত এএসআই আব্দুল হালিম বলেন, “বৈঠকের সময় হঠাৎ করে বিবাদী পক্ষের লোকজন সেলিম রেজাকে মারধর করে। আমরা চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা।”

সেলিম রেজার বিভিন্ন ছবি ঘেঁটে দেখা গেছে, তার অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্যতার প্রমাণ রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা এবং আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু স্মৃতি সংসদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলেও তথ্য মিলেছে। তবে বর্তমানে তিনি নিজেকে ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ পরিচয়ে পরিচিত করছেন, যদিও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি “কথিত সমন্বয়ক” হিসেবে বেশি পরিচিত।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে আলাদা করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। যদিও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, থানার অধিকাংশ পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখেননি।

এ ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা থানার সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ ও স্লোগান দেয়। তাদের অভিযোগ, সেলিম রেজা মূলত আওয়ামী ঘরানার লোক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানির জন্য এসব ঘটনার জন্ম দিয়েছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়,পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে যে, থানা এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।

এই ঘটনার বিষয়ে সেলিম রেজার মোবাইলে যোগাযোগ করলে একজন পরিচিত ব্যক্তি জানান, তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং মাথায় ও হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা সালা উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মোহাম্মদ ওসমান বলেন,“ঘটনার বিষয়ে আমিও শুনেছি। তবে সালা উদ্দিনের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি, দেখা হলে বিস্তারিত জানতে পারব।”

তবে বিএনপির কিছু নেতারা জানিয়েছেন, সমন্বয়ক পরিচয়ে তারা বিএনপি নেতাদের গালি দিয়েছেন। এরপর গন্ডগোল লাগে।

কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলেন, “আমি ওই সময় থানায় উপস্থিত ছিলাম না। সিএমপি কার্যালয়ে মিটিংয়ে ছিলাম। তবে ঘটনা জানার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে এবার আন্দোলনে নামলো ফরেস্টার ও ফরেস্ট গার্ডরা 
পরবর্তী নিবন্ধফজলে করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি ট্রাইব্যুনালের