কর্ণফুলীতে ওয়ারিশ সনদে কিউআরকোডের লিঙ্ক লন্ডনের!

জালিয়াতির অভিযোগ পাঁচ জনের চক্রের বিরুদ্ধে

পটিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীতে লন্ডন ভিত্তিক একটি অ্যাপস থেকে কিউআরকোড বসিয়ে নকল ওয়ারিশ সনদ নিয়ে তা উপজেলা ভূমি অফিসের নামজারিতে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ জনের একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযুষ কুমার চৌধুরী।

জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে তাতে ওয়ারিশ সংখ্যা বৃদ্ধি করে পুনরায় কিউআরকোড বসিয়ে আনুমানিক ২০২৫ লাখ টাকার জমির খতিয়ান পেতে নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।

এদের মধ্যে তিন জন মহিলা আর দুজন পুরুষ। তারা সমপ্রতি জমিটি ইনামজারি পেতে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেছেন বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সমপ্রতি শিকলবাহা ইউনিয়নের প্রধান সড়কের পাশের একটা জমি পাঁচ জনের নামে নামজারি করার জন্য আবেদন জমা পড়ে। জমির নামজারি আবেদনের (৫০৫২) সাথে শিকলবাহা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ওই চক্রের দেওয়া দুটি ওয়ারিশ সনদে নিজ দপ্তরের সিল স্বাক্ষর করে সত্যায়িত করে উপজেলায় প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু ফাইলটি এসিল্যান্ডের সামনে আসলে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তিনি কিউআরকোডটি স্ক্যান করে দেখেন। এতেই এসিল্যান্ডের সামনে জালিয়াতির চিত্র ধরা পড়ে। কেননা, স্বভাবতই ইউনিয়ন পরিষদ যে ওয়ারিশ সনদগুলো সরবরাহ করে থাকে; সেসব সনদের কিউআরকোড স্ক্যান করলে প্রত্যয়ন লিঙ্ক প্রবেশ করবে এঙপ্লোর আইটি কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত সনদপ্রত্যয়ন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রত্যয়ন ওয়েব সাইটে। যেখানে স্পষ্ট ভাবে কর্ণফুলী ডট ওআরজি ওয়েব সাইট লিখা আসবে। কিন্তু প্রতারক চক্রের সরবরাহ করা ওয়ারিশ সনদের কিউআরকোড স্ক্যান করলে লিঙ্ক নিয়ে যায় লন্ডনের মিকিউআর ডটকমে। আর যে ফটোকপি ওয়ারিশ সনদে কিউআরকোড বসানো হলো, তাতে ওয়ারিশ দেখা মিলে পাঁচ জনের। কিন্তু কোড স্ক্যান করলে যে লিঙ্কে সনদ উপস্থাপিত হয় সেখানে দেখা মিলে সাত জন ওয়ারিশ।

এতে দুই সনদে দুই ধরনের তথ্য। আরেক সনদে অর্ধেক কিউআরকোড। সহকারী কমিশনারের চোখে এসব নানা অসঙ্গতি নজরে আসে। পরে তিনি ওয়ারিশ সনদ দুটির বিষয়ে সত্যতা জানতে শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেন।

আবেদনকারীগণ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ১০২০৩৯ নম্বর ওয়ারিশ সনদ মূলে ইস্যুকৃত শিকলবাহার মোহাম্মদ মিয়া স্যারাং এর ছেলে নুর মোহাম্মদের একটি ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন। একই তারিখের ১০০৩১৪ নং সনদমূলে আরেকটি ওয়ারিশ সনদে শিকলবাহার আবদুল ছৈয়দের ছেলে নুর মোহাম্মদের ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ধরনের জালিয়াতি আগেও ঘটেছিল। কলেজ বাজার এলাকায় একটি কম্পিউটার দোকানকে আমরা সনাক্ত করেছিলাম। প্রশাসিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাব।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ওয়ারিশ সদন দিয়ে যাচাই বাছাই করতে গিয়ে জালিয়াতির চিত্রটি চোখে পড়ে। এ ধরনের কোনো সনদ শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইস্যু করা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকদিন পর লাশ মিলল দেড় কিলোমিটার দূরে
পরবর্তী নিবন্ধকাশির সিরাপে নেশা দ্রব্য মিশিয়ে সেবন, দুই তরুণের মৃত্যু