চট্টগ্রামে গত এক দিনে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দুইশ’ ছাড়িয়েছে যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সিভিল সার্জন বলেছেন, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে ‘অনীহার’ কারণেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিডিনিউজ
এ পরিস্থিতিতে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নগরবাসীকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা, জনসমাগম পরিহার এবং আয়োজন-অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলায় দুই হাজার ৪৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে অর্থাৎ, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার প্রায় ৯ শতাংশ।
এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম নগরীতেই ১৮৩ জন এবং সবগুলো উপজেলায় মোট ২৯ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৪০ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৪৪১ জনই নগরীর বাসিন্দা।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “একদিনে দুইশ’ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘটনা প্রায় দেড় মাস পরে ঘটল। সারাদেশেই সংক্রমণ বাড়ছে। চট্টগ্রামেও বাড়ছে। মূলত সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং বছরের এই মৌসুমে যেকোনো ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে-এ তিন কারণে সংক্রমণের হার বাড়ছে। এছাড়া পরিবারের কেউ একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করছি।”
ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, “টিকা দেওয়ার পর অনেকে ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী’ হয়ে উঠেছেন যা ‘উচিত নয়’। গত বছরও এই সময়টায় সংক্রমণ বেড়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতন না হলে মে-জুন মাসে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।”
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও চট্টগ্রামে হাসপাতালে রোগীর চাপ এখনও ‘খুব বেশি নয়’ দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, “অনেকেই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা থাকায় আইসিইউতে খুব বেশি রোগীকে পাঠাতে হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগীরা সেবা নিচ্ছেন।”
স্বাস্থ্যবিধি মানতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রায় প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ও জনসমাগমের স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে তাতেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় তেমন সাড়া মিলছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “সংক্রমণ বাড়ার কারণ হলো আমরা সবাই রিল্যাক্সড হয়ে গেছি। সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা এগুলো অবশ্যই মানতে হবে।”
এদিকে নগরবাসীকে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত ‘স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার’ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মানবদেহে টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পরও কাউকে একেবারে নিরাপদ ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এ কারণে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।”
এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র অবহেলা করা হলে নিজের ও অপরের জন্য বিপদ তৈরি হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা, জনসমাগম পরিহার এবং উপলক্ষমূলক অনুষ্ঠানাদি সীমিত পরিসরে আয়োজন করা না হলে এবং অতীব প্রয়োজন ব্যতীত সাধারণ কর্মসূচি বন্ধ রাখা না হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। সর্বোপরি বিয়ে-শাদিসহ সকল সামাজিক অনুষ্ঠানে সীমিত অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনানুসারে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।”
নগরবাসীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আরো সজাগ ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বড় বিপদ আসন্ন।”
গত বছরের মে-জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্ত রোগীর হার ছিল নমুনা পরীক্ষার ২৮-৩০ শতাংশ। জুলাই মাসের শুরুতে তা কমে ১৯-২২ শতাংশ হয় ।
জুলাইয়ের শেষ দিকে এই হার ছিল ১১-১২ শতাংশ। আগস্ট মাসের শুরুতে শনাক্তের হার কিছুটা বেশি থাকলেও আগস্ট মাসের শেষ দিকে তা ছিল ১০ শতাংশের মতো।
সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে সাড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ছিল শনাক্তের হার। অক্টোবর মাসের শুরুতে তা আবার বেড়ে সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশে দাঁড়ায়। মধ্য নভেম্বরে তা বেড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হয়।
এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার কম ছিল। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে তা আবার বেড়ে ৬-৮ শতাংশের মধ্যে আসে। চলতি মাসে তা বেড়ে ৮-১০ শতাংশের মতো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৩৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের মধ্যে ২৮১ জনই ছিলেন নগরীর বাসিন্দা।