করোনা : ভারতে অক্টোবরে আসতে পারে তৃতীয় ঢেউ

| শনিবার , ১৯ জুন, ২০২১ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

ভারতে আগামী অক্টোবর নাগাদ করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে এবং দেশটিতে আরো অন্তত এক বছর এ মহামারী জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তবে চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে যতটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের বেলা তেমনটা হবে না। বরং তখন পরিস্থিতি বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও মত তাদের। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এক মতামত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবর বিডিনিউজের।
গত ৩ থেকে ১৭ জুন রয়টার্স বিশ্বের ৪০ জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ভাইরাসবিদ, মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তাদের মতামত জানতে চায়। তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট মাত্রায় টিকাদান কার্যক্রমের গতি বাড়ানো হলে ভবিষ্যত ওই প্রাদুর্ভাব থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস (এআইআইএমএস) এর চিকিৎসক ডা. রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, ওটা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হবে। কারণ তখন আরো বেশি লোকজন টিকা গ্রহণ করবেন। এছাড়া, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রাকৃতিকভাবে মানুষের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে সেটাও কাজ করবে। ভারত এখন পর্যন্ত তাদের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশকে টিকা দিতে পেরেছে। ফলে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ এখনো সংক্রমিত হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ বছর ভারতে টিকাদান কার্যক্রমের গতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তবে তারা আগে ভাগে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে চরম বিপর্যস্ত ভারতে গত কয়েকদিনে সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে কয়েকটি রাজ্য এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে।
ভারতে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের সময় শিশু এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ৪০ জনের মধ্যে ২৬ জনই ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেল্‌থ অ্যান্ড নিউরোসাইন্সেস (এনআইএমএইচএএনএস) এর এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. প্রদীপ বানান্দুর বলেন, যেহেতু এখন ওই বয়সের কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না তাই তারাই তখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে।
এ বিষয়ে ডা. দেবী শেঠি বলেন, যদি গণহারে সংক্রমিত হতে থাকে এবং আমরা সেজন্য প্রস্তুতত না থাকি তবে শেষ সময়ে আমরা কিছুই করতে পারবো না। সেটা হবে একেবারে ভিন্ন একটি সমস্যা। কারণ, ভারতে শিশুদের জন্য আইসিইউ শয্যার সংখ্য খুব, খুবই কম। তাই শিশুরা গণহারে সংক্রমিত হলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে। তবে বাকি ১৪ বিশেষজ্ঞ মনে করেন কোভিড-১৯ মহামারীতে শিশুদের তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।
জরিপে অংশ নেওয়া ৩৮ জন বিশেষজ্ঞের মধ্যে ২৫ জনই মনে করেন করোনাভাইরাস ভবিষ্যতে আরো রূপ বদল করলেও ওইসব ধরন টিকার কার্যকারিতাকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না। অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে ৪১ জনের মধ্যে ৩০ জন বলেছেন, করোনাভাইরাস আরো অন্তত এক বছর ভারতে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে থেকে যাবে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের রবার্ট গ্যালো বলেন, কোভিড-১৯ এমন একটি সংকট যেটির সমাধান সম্ভব, এ রোগের টিকা সহজেই পাওয়া গেছে। এছাড়া টিকাদান এবং রোগ সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়েছে তাতে দুই বছরের মধ্যে ভারতে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি ক্ষমতা পেলে রক্তের বন্যা বইবে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধভুয়া পাসপোর্ট এনআইডি ও সীলমোহর জালিয়াতচক্রের সদস্য আটক