করোনা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ৬০ গবেষণাপত্র

শীর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শুরুর দিকে গবেষণা ছিল অপ্রতুল। চট্টগ্রামের পরিস্থিতি কিংবা তার সমাধান নিয়ে প্রথম চার মাসে তেমন কাজ দেখা যায়নি। কিন্তু বছরের শেষ দিকে এসে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে একের পর এক গবেষণা প্রবন্ধ। উঠে আসছে নতুন সব তথ্য, চট্টগ্রামে করোনার ভিন্নতা আর সার্বিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৬০টি গবেষণাপত্র। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে রয়েছে পঁচিশটি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে দশটি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছয়টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয়টি, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচটি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র। গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে কোভিডে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার প্রকৃতি ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা, চট্টগ্রামের কোভিড রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন উপসর্গ ও জটিলতা, এক্স-রের মাধ্যমে কোভিড নির্ণয়, সার্স কভ-২ এর জিনোমের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশের সাথে কোভিড-১৯ এর হার বৃদ্ধির সম্পর্ক। চট্টগ্রামের গবেষকদের মধ্যে সর্বাধিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অলি আহমেদ পলাশের (সাতটি)। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ ছিদ্দিকি ও চমেকের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তারের প্রকাশনা। এছাড়া খ্যাতনামা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে একাধিক প্রকাশনা এসেছে চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. আদনান মান্নান ও মাহবুব হাসান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলোক পাল, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. দ্বৈপায়ন সিকদার এবং বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তালহা বিন এমরানের।
গবেষণার উল্লেখযোগ্য ফলাফলের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে কোভিড রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিক, ১০ শতাংশ কোভিড রোগীর একেবারেই উপসর্গহীন, এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৪৭ ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ কোভিড নিয়ে সচেতন ছিলেন না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের কোভিড-১৯ রোগীদের ফুসফুসে ভিন্ন ধরনের জিনগত পরিবর্তন, আইসিইউতে মৃত্যুবরণকারী কোভিড রোগীদের ৭০ ভাগের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর তথা আন্তর্জাতিক খাতিসম্পন্ন প্রকাশনা ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত জার্নাল অফ ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুনায়েদ সিদ্দিকির প্রবন্ধ, যুক্তরাজ্যের প্লস ওয়ান নামক জার্নালে চবির অধ্যাপক ড. অলক পাল, ড. দ্বৈপায়ন সিকদার ও ড. মোশাররফ হোসেনের প্রকাশনা, টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের জার্নাল অফ বায়োমলিকুলার স্ট্রাকচার অ্যান্ড ডায়নামিক্সে চবির অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিন ও মশাররফ হোসেন ভুইয়ার নিবন্ধ। এপ্লাইড অর্গানোমেটালিক কেমিস্ট্রিতে একই প্রতিষ্ঠানের মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ও ওয়াহিদা সুমির গবেষণা প্রবন্ধ।
বেশিরভাগ ছিল যৌথ গবেষণা। সবচেয়ে বেশি যৌথ গবেষণা দেখা যায় চবি, চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে। এছাড়া ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কিংস কলেজ লন্ডন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথ গবেষণা। গবেষক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চট্টগ্রামের। এছাড়া ছিল গোস্ট রিসার্চ গ্রুপ এবং জিনোমিক্স রিসার্চ গ্রুপ সিভাসু।
গবেষকরা মনে করেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আর্থিক সহায়তা পেলে চট্টগ্রামে অনেক বেশি মানসম্পন্ন ও বিশ্বমানের গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্ভব।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী আজাদীকে বলেন, করোনার শুরু থেকেই আমি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কাজ করে যাচ্ছি মেডিসিন কনসালটেন্ট হিসেবে। চট্টগ্রামের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল এটি। এখানে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম সব সময় বাইরের দেশের গবেষণা বা কাজগুলো সামনে আসছে। চিন্তা করলাম আমাদের দেশের বা অঞ্চলের মানুষের নিয়ে আমরা করতে পারি। এখানে কেমন ধরন বা কীভাবে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের কী কী সমস্যা হচ্ছে এবং এর পরে কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে; এসব বিষয় জানার চেষ্টা করলাম। এর জন্য এক হাজার কোভিড রোগীর ওপর গবেষণা চালাই। মুঠোফোনে তাদের থেকে ডাটা সংগ্রহ করেছি। এতে আমরা বেশ কিছু ফলাফল পেয়েছি। যেটা কাজে দিয়েছে।
চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, আমাদের কিছু গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। আরো কিছু প্রকাশিত হওয়ার পথে। আমরা প্রথমে করোনা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে কেমন জ্ঞান রয়েছে এবং সেটা কীভাবে মেনেছে সেটা নিয়ে গবেষণা করেছি। এটা বিশ্বের ভালো মানের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নিয়ে। এরপর করেছি নিম্নবিত্তদের নিয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের জীবন-জীবিকা ও মানসিক অবস্থা কেমন সেটা জানার চেষ্টা করেছি। এরপর করোনায় স্বাস্থ্যকর্মীরা কেমন ঝুঁকির মধ্যে আছে সেটা গবেষণা করেছি। এছাড়া আরো কয়েকটি কাজ করেছি। এখন একটি কাজ চলছে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে।
চবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অলি আহমেদ পলাশ আজাদীকে বলেন, চীনের এক বন্ধুর সাথে মার্চেই প্রথম কোভিড নিয়ে একটি গবেষণা করি। করোনা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে কয়েকটি গবেষণা করেছি। এতে চবিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথের শিক্ষকরাও ছিলেন। এরপর করোনা সম্পর্কিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হই। সেখানেও কয়েকটি গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ছিল করোনার কারণে মানুষের মাঝে যে বৈচিত্র্য বা পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া কয়েকটি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছি। সেগুলো শীঘ্রই প্রকাশ পাবে আশা করছি। এর মধ্যে রয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের মাঝে সামাজিক গণমাধ্যমের ব্যবহার এবং আচরণের মাত্রা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণফোরাম থেকে পদত্যাগ করলেন রেজা কিবরিয়া
পরবর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে হামলা ওসি প্রত্যাহার