মহামারী করোনা ভাইরাস কিংবা প্রাণঘাতী ক্যান্সার এবং এইডসসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল পরীক্ষায় ব্যবহৃত কিট ও রি-এজেন্ট স্বল্পদামে আমদানি করা হতো মেয়াদোত্তীর্ণের কিছুদিন আগে। এরপর এসব কিট ও রি-এজেন্ট দেশে এনে নিজের ইচ্ছে মতো মেয়াদ বসিয়ে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত, মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ সময় তিনটি প্রতিষ্ঠানের মোট নয়জনকে আটক করা হয়েছে।
আটক নয়জন হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা (৪০), ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল আলম (৪২), প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাবরক্ষক মো. সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক এস এম মোজফা কামাল (৪৮)। খবর বাংলানিউজের।
র্যাব জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কিটের মধ্যে করোনা, ক্যানসার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়া রোগ পরীক্ষার কিট ছিল। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ কিটগুলো সরবরাহ করা হতো। তদন্তে সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বের হয়ে আসবে।
বিদেশ থেকে আমদানি ও রফতানি চ্যানেলের মাধ্যমে এসব সামগ্রী আনা হতো। অভিযান চালানো তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটিও স্বনামধন্য নয়। তাদের এ কিট ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম আমদানির কোনো অনুমোদনও ছিল না। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে র্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার। তিনি জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য কিট ও রি-এজেন্ট বাজারজাত করে আসছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকায় বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানীর এঙন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লিমিটেড নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দেখা যায়, তারা বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এমন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ওয়্যারহাউস থেকে বিপুল পরিমাণ অননুমোদিত মেডিক্যাল ডিভাইস, মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্ট জব্দ করা হয়।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, তারা পারস্পরিক যোগসাজশে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সহসা মেয়াদোউত্তীর্ণ হবে এমন টেস্ট কিট ও রি-এজন্ট আমদানি করতেন। তারপর টেম্পারিং করে সেসব টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারজাত করে আসছিলেন।
গত ২০১০ সাল থেকে চক্রটি এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান।