করোনা, চলমান বিশ্ব ও আগামী প্রজন্ম

নুরুল আমিন | মঙ্গলবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাস মহামারী চারদিকে। মৃত্যু ভয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন আজ পৃথিবীর সমগ্র মানুষ ক্রান্তিকাল পার করছে। ভাইরাসটি চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীর প্রায় রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিহাস সমীক্ষায় জানা যায় ১৭২০ সালে প্লেগ, ১৮২০ সালে কলেরা, ১৯২০ সালে স্প্যানিস ফ্লু এবং সর্বশেষ ২০২০সালে করোনা ভাইরাসের (কোভিট-১৯) ভয়ঙ্কর আক্রমণে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো বেহাল অবস্থায় মাথা নুইয়ে পড়েছে। আজ যারা পরাশক্তি বিজ্ঞানের জয়যাত্রা নিয়ে মুখে ফেনা তুলেছিল – তাদের একটু হলেও লজ্জা হওয়া দরকার। কেননা পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতে মগ্ন থাকার দরুণ বিজ্ঞানকে নিয়ে মানুষ বাঁচানোর ভ্যাকসিন কিংবা ওষুধ আবিষ্কারে তাদের মনোযোগ ছিল না।
খালি চোখে অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবীর মানুষের এই করুণ অবস্থা! এ রকম মহামারী আজ হতে শত, শত বৎসর পূর্বেও এসেছিল মানব সম্প্রদায়ের মাঝে। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে, নির্লজ্জের মত বাহু শক্তি দণ্ডায়মান করতে প্রাণী হত্যায় লিপ্ত, এই বিরাজমান অস্থিরতার দায় এড়াতে পারবো কি আমরা? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো মানব প্রেম, জীবের প্রতি দয়া। জীবের আত্নায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বিরাজমান। সৃষ্টিকর্তার অসংখ্য সৃষ্টি প্রাণরাজি যে যার অবস্থান থেকে সবাই যিকির ও ইবাদতে মগ্ন থাকে।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মানব সম্প্রদায় ভূমি কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে শিশু-কিশোর, নারী নির্যাতন, অনাগত শিশু হত্যা ও অন্যায় ব্যভিচার ক্রমান্বয়ে লিপ্ত হতে হতে চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। উন্নত রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং পরমাণু বোমা পরীক্ষার জন্য সাগরে নিক্ষেপে মাছ ও জলজ প্রাণী হত্যা, মরুভূমিতে নিক্ষেপে নিরীহ মরুপ্রাণী হত্যা, পাহাড়ের চূড়ায় বোমা নিক্ষেপে পাহাড়ের নীরবতা ধ্বংস করা হচ্ছে। সর্বোপরি গ্যাসের অপব্যবহারে পৃথিবীর নির্মল পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞে বাতাসকে বিষাক্তময় করে তোলার নানান চক্রান্তে বিভোর। এভাবে পৃথিবীকে অস্থির করে জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত করতে থাকলে জমাটকৃত বরফ যেকোন সময় গলে গিয়ে মহাবিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর প্রতি নানা অপকর্ম বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। মূলত এ সকল সমস্যার জন্য আমরা মানব সম্প্রদায় নিজেরাই প্রধানত দায়ী। পৃথিবী আমাদের একার নয় তাই এখানে সবার সমান অধিকার।
করোনা ভাইরাস একটি সামান্য ভাইরাস যা দৃষ্টিগোচর হয় না। অথচ তার আক্রমণে পৃথিবীর বড় বড় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলো আজ কত অসহায়! বিজ্ঞানের সুফল তারা শুধু নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের কাজে না রেখে যদি মানব স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করে মানুষের কল্যাণকর কাজে উদ্ভাবন করে মেডিকেল সায়েন্সকে আরো উন্নতর করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতো, তাহলে এই অন্ধকার কেটে গিয়ে দ্রুত মানব স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান জয়ের নিশানা উড়ানো সম্ভব ইনশাআল্লাহ্‌।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর একটা বিষয় খুবই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে অনেক রাষ্ট্র বৈরিতা পরিহার করে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আসুন সকল বিবাদ ভুলে পরমাণুর অস্ত্রের বিস্তার না ঘটিয়ে, পরমাণু বোমা ধ্বংস করে, নির্মল আকাশ বাতাস উপহার দিয়ে আগামীর অনাগত শিশু, জীব বৈচিত্র্যের জন্য সবুজ সবুজে, লোকে-লোকারণ্যে, সুন্দরে অভয়ারণ্যই নতুন সূর্য উদয়ের প্রত্যাশায় নিজে বাঁচতে ও বাচাঁতে শিখি। আমাদের সকল কৃতকর্মের জন্য মহান প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এই করোনা ও মহামারী থেকে পরিত্রাণ চেয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারলেই কেবল আমাদের আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চিরভাস্বর হয়ে থাকব। এর ব্যত্যয় ঘটলে ইতিহাস বর্তমান নেতৃত্বকে কখনোই ক্ষমা করবে না। তখন আমাদের করুণ ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী থাকব।
লেখক : সংবাদপত্র এজেন্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাছের ভাষা
পরবর্তী নিবন্ধজ্ঞানতাপস-শিক্ষাবিদ আবদুর রহমান