একটি সাধারণ ভাইরাস আমাদের সবার জীবনকে একেবারে থমকে দিয়েছে। আমরা এর আগেও এরকম ভাইরাসের হুমকিতে পড়েছি। মহামারিরও মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু প্রতিটি নতুন সংক্রমণ বা মৌসুমী ফ্লুর জন্য এর আগে কখনো বিশ্বে সবকিছু এভাবে বন্ধ হয়ে যায়নি। এই করোনাভাইরাসে তাহলে এমন কি আছে? এর জীবতত্ত্বে এমন কি ধাঁধাঁ আছে যেটি আমাদের শরীর এবং জীবনের জন্য এত বড় হুমকি তৈরি করছে? খবর বিবিসি বাংলার।
ছলচাতুরিতে সেরা: সংক্রমণের শুরুর দিকে এই ভাইরাস আমাদের শরীরকে ধোঁকা দিতে পারে। করোনাভাইরাস হয়তো আমাদের ফুসফুসে এবং শ্বাসনালিতে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। অথচ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হয়তো ভাবছে সবকিছু ঠিক আছে। এই ভাইরাসটি আসলে দুর্দান্ত। এটি হয়তো আপনার নাকের মধ্যে ভাইরাসের কারখানা খুলে বসেছে, অথচ আপনার মনে হচ্ছে শরীর বেশ ভালোই আছে, বলছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পল লেহনার।
আঘাত করে পালিয়ে যায়: আমাদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় আমরা যেদিন অসুস্থ বোধ করবো, তার আগের দিন। কিন্তু লোকজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অসুস্থ বোধ করতে সময় লাগে আরও প্রায় এক সপ্তাহ। এটি আসলে এই ভাইরাসের একটি দারুণ বিবর্তন কৌশল-আক্রান্ত হওয়ার পরও আপনি বিছানায় পড়ে থাকছেন না, আপনি বাইরে যাচ্ছেন, আপনি দারুণ সময় কাটাচ্ছেন, বলছেন প্রফেসর লেহনার। সোজা করে বলতে গেল, এই ভাইরাস আসলে জানতে চায় না আপনি মরছেন কীনা, বলছেন প্রফেসর লেহনার। এটি এমন এক ভাইরাস যেটি আঘাত করেই পালাচ্ছে।
এটি নতুন, তাই আমাদের শরীর প্রস্তুত নয়: সর্বশেষ মহামারির কথা মনে আছে? ২০০৯ সালে এইচ-ওয়ান-এন-ওয়ান নিয়ে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। এটির আরেক নাম ছিল সোয়াইন ফ্লু। তবে পরে দেখা গিয়েছিল এটি আসলে সেরকম প্রাণঘাতী নয়। কারণ বয়স্ক মানুষদের এমনিতেই কিছু সুরক্ষা আছে। এই সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস আসলে অতীতের অন্য কিছু ভাইরাসের মতই। আরও চার ধরণের করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়, যার লক্ষণ সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ট্রেসি হাসেল বলেন, এটি একটি নতুন ভাইরাস। কাজেই এটির বেলায় আমাদের শরীরে আগে অর্জন করা কোন প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই।
অদ্ভুত এবং অপ্রত্যাশিত আচরণ: কোভিড শুরু হয় ফুসফুসের রোগ হিসেবে। সেখানেও নানা রকম অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটায় এটি। এরপর এটি পুরো শরীরকেই আক্রান্ত করতে পারে। লন্ডনের কিংস কলেজের প্রফেসের মাউরো জিয়াচ্চা বলেন, কোভিডের কিছু বৈশিষ্ট্য একেবারই অনন্য। তিনি বলছেন, এটি আসলে অন্য যে কোন প্রচলিত ভাইরাল রোগ থেকে আলাদা। এটি যে কেবল ফুসফুসের সেলগুলো মেরে ফেলে তা নয়, এটি ফুসফুসের সেলগুলির বিকৃতিও ঘটায়। একটি সেল আরেকটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় বড় অকার্যকর সেল তৈরি করে, এগুলোকে বলে সিনসিটিয়া। এই বড় সেলগুলো ফুসফুসে লেগে থাকে। শারীরিক স্থূলতা: কেউ যদি শারীরিকভাবে স্থূল হন, তার জন্য কোভিড অনেক বেশি ক্ষতিকর। পেটমোটা লোকজনের বেলায় ঝুঁকি অনেক বেশি, তাদের নিবিড় পরিচর্যার দরকার পড়তে পারে, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। এটিও বেশ অস্বাভাবিক। শারীরিক স্থূলতার সঙ্গে এই ভাইরাসের যে সম্পর্ক, অন্যান্য ভাইরাসের বেলায় কিন্তু সেটি দেখা যায়নি। অন্যান্য ফুসফুসের রোগে বরং মোটা লোকজন ভালোই সেরে উঠে, বলছেন ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের প্রফেসর স্যার স্টিভেন ও রাহিলি।