তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ কী ভয়ঙ্কর পরিবর্তন এনে দিল আমাদের সামাজিক জীবনে। আমার মনে হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এত ভয়ঙ্কর পরিবর্তন পৃথিবীতে আসেনি। শুধু যুদ্ধই বা বলি কেন, আমার মনে হয় পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আজ অবধি পৃথিবীতে এমন কোন দৃশ্যমান শাসকের আবির্ভাব ঘটে নি, যার হুকুমে এক মিনিটেই সমস্ত পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেছে। ওড়েনি আকাশে উড়োজাহাজ, সাগরে ভাসেনি স্টিমার। এই তিনটি অক্ষর খুব সহজেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আমাদের সুপার পাওয়ারের সাথে যা আমাদের বর্তমান পৃথিবীতে খুব প্রয়োজন ছিল। আমরা মানুষেরা ছুটেছিলাম লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো, ছিলনা আমাদের সঠিক কোন গন্তব্য।
এখন আমরা এমন এক সুশাসকের রাজত্বে বাস করছি যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে এসেছে অনেকখানি। এখন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে। মন্ত্রী থেকে রিঙাওয়ালা সকলেরই চিকিৎসা ব্যবস্থা একই রকম। আগে যে বাবা তার কন্যার বিয়ে দিতে হিমশিম খেত করোনা তাদের বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিলো, সাহস দিল। হাসি ফুটল বাবার মুখে। প্রতিটি জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুইটা দিক থাকে, করোনারও তাই আছে। একদিকে সে যেমন কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ, অনেক প্রিয় মুখ, ঠিক তেমনি সে দিয়েছে সমাজের স্থিতি, মুছে দিয়েছে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। অন্তত চিকিৎসার ক্ষেত্রে, সচেতন করেছে প্রতিটি অচেতন মানুষকে শিখিয়েছে মানুষে-মানুষে এক কাতারে দাঁড়াতে- ভুলতে ভেদাভেদ। আজ খুব মনে পড়ছে সেই বাক্য – ‘দাও ফিরে সে অরণ্য / লও এ নগর’। তাই করোনা তোমায় অশেষ ধন্যবাদ, শুধু অনুরোধ এটুকুই- নিও না আর আমাদের প্রাণ। অবশেষে বলব সোশ্যাল ডিসটেন্স-এর যে শিক্ষা করোনা আমাদের দিয়ে গেছে, পৃথিবীতে করোনা থাক বা না থাক কিছু মানুষের সাথে আমাদের সোশ্যাল ডিসটেন্স অবশ্যই থাকবে।