সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্থায়ী হচ্ছে করোনা ওয়ার্ড। গত বছরের (২০২০ সালে) প্রথম দিকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে হাসপাতালগুলোতে সাময়িকভাবে করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। মূলত অন্য এক বা একাধিক ওয়ার্ডের কার্যক্রম সংকুচিত করে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয়। সাময়িকভাবে এই করোনা ওয়ার্ড করতে গিয়ে কোনো কোনো হাসপাতালে বেশ কয়টি ওয়ার্ড সরিয়ে নিতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো হাসপাতালে অন্য সব রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে করে অন্য রোগের চিকিৎসা সেবায় কিছুটা হলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার করোনা ওয়ার্ডকে স্থায়ী ওয়ার্ড হিসেবে রূপ দেয়া হচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। হাসপাতালগুলোকে আলাদা করে স্থায়ী করোনা ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনা পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, দেশ থেকে খুব তাড়াতাড়ি যে করোনা নির্মূল হবে, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। আমাদের হয়তো এই করোনা নিয়েই চলতে হবে। সব দিক বিবেচনায় হাসপাতালে আলাদাভাবে স্থায়ী করোনা ওয়ার্ড স্থাপনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আলাদা জায়গা নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। অবশ্য মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, পরবর্তীতে হয়তো এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পার্শ্ববর্তী তিনটি ওয়ার্ড (ক্যাজুয়াল্টি, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং চর্ম ও যৌন রোগ) অন্যত্র সরিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা করোনা ব্লক গড়ে তোলা হয়।
হাসপাতালের মূল প্রবেশপথে (নিচতলার ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত) বাম পাশের পুরো ব্ল্লকটিতে প্রাথমিকভাবে একশ শয্যায় এই করোনা চিকিৎসা শুরু করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের চারতলায় আরো একটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম সংকুচিত করে সেখানেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
সবমিলিয়ে দুই শতাধিক শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে চমেক হাসপাতাল। গত বছরের ১৫ মে মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে চমেক হাসপাতালের একাংশকে কোভিড-১৯ (করোনা) ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে চালুকরণে অনুমোদন দেয়া হয়। সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে কোনো প্রতিবন্ধকতা যাতে না থাকে, এমন শর্তসহ আরো বেশ কয়টি শর্তে এ অনুমোদনের কথা বলা হয় মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।
আলাদা স্থায়ী করোনা ওয়ার্ড স্থাপনের বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, কয়েকটি ওয়ার্ড সরিয়ে আমরা আলাদাভাবে করোনা ব্লক করেছি। এখন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমরা ওই ব্লকটি-ই হয়তো স্থায়ী করোনা ওয়ার্ডে রূপ দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা ওয়ার্ডগুলোকে কোথাও নতুন করে স্থানান্তর করতে হতে পারে।
হাসপাতাল প্রশাসন জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরনো একাডেমিক ভবনের জায়গায় শীঘ্রই চমেক হাসপাতাল (২) নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ভবনটি হলে সরিয়ে নেয়া ওয়ার্ডগুলো নতুন ভবনেই স্থানান্তর করা হতে পারে। এতে করে করোনা ওয়ার্ড স্থাপনে আলাদা জায়গা নির্ধারণের আর প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালের অন্যান্য সব বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে হাসপাতাল দুটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হয়। এখনো করোনা রোগীদের চিকিৎসা ছাড়া অন্যান্য সব রোগের চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে হাসপাতাল দুটিতে।












