করোনায় মৃত্যু এখন কেন বাড়ছে

| মঙ্গলবার , ১৩ জুলাই, ২০২১ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দৈনিক মৃত্যুও ছাড়িয়েছে দুইশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, গত এক সপ্তাহে ৭৭ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ জনের। এর মধ্যে এই প্রথম দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়ায় গতকাল সোমবার। এদিন ২২০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগের দিন রোববার ২৩০ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়। মহামারীর এক বছরের বেশি সময় পর এখন মৃত্যু কেন এত বাড়ছে, এই প্রশ্নে চিকিৎসকরা সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সংক্রমণ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হলেও মানুষ তা আমলে নিচ্ছে না। শেষ সময়ে আসছে চিকিৎসা নিতে, তখন কিছুই করার থাকছে না। খবর বিডিনিউজের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আবার চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনাকেও কাঠগড়ায় তুলছেন। তারা বলছেন, মহামারীর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ দেওয়া যায়নি, সেবাও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে রোগীদের ঘুরে ঘুরে মরতে হচ্ছে। আবার দেশে এখন কোভিড রোগীরা যে ধরনটি বেশি আক্রান্ত, সেই ডেল্টা বিশ্বজুড়েই উদ্বেগের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার জন্য দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসাকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জ্বর হওয়ার পর অনেকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে এমনিতে ভালো হয়ে যাবে বলে বসে থাকছে। এভাবে অবস্থা বেশি খারাপ যখন হয়ে যাচ্ছে, তখন হাসপাতালে আসছে। দেখা যাচ্ছে- যারা হাসপাতালে এসে মারা যাচ্ছে, তারা হয়ত একদিন বা একদিনের কম চিকিৎসা নিয়েই মারা যাচ্ছেন। এত বেশি খারাপ অবস্থায় রোগীরা আসছে যে, আমরা একদিনও সময় পাচ্ছি না সেবা দেওয়ার জন্য।’
ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার তানভীর ইসলামও মনে করেন, সচেতনতার অভাবই পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘এমন রোগী প্রতিনিয়তই পাই যে, তাদের ভাষ্যমতে তারা সাধারণ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত, কিন্তু টেস্ট করার পর পজিটিভ হচ্ছেন। কোভিড পজিটিভ হয়ে যাবার ভয়ে অনেকেই টেস্টই করাতে চায় না। সাধারণ সর্দিজ্বর ধরে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকে, জনসমাগমে যায়।’ এই চিকিৎসক বলেন, ‘যারা সচেতন তারা বুঝতে পারলেই চিকিৎসা নিতে আসছেন। যারা সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে একে এড়িয়ে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে শেষ সময়ে আসছেন। তখন তেমন কিছু করার থাকে না আমাদের। এ ধরণের রোগীর সংখ্যাই অনেক।’
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথও মনে করেন, মানুষ সচেতন হলে করোনাভাইরাসে এতো মৃত্যু দেখতো না দেশ। তিনি বলেন, মৃদু উপসর্গের রোগীদের বাসায়, মাঝামাঝি পর্যায়ের রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া এবং জটিল পর্যায়ে গেলে আইসিইউর মতো ব্যবস্থা লাগে। তিনি বলেন, ‘তাহলে আমি সিভিয়ার হতে দেব কেন? যাদের ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা- জটিল রোগ আছে, তাদের দুই-একজনের এমন হতে পারে। কিন্তু এমন অনেক রোগী আছে, আগে থেকে চিকিৎসা সেবা নিলে তারা হয়ত মারা যেত না।’ পরিস্থিতি নাজুক হয়ে ওঠার জন্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করে ডা. অসীম কুমার মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাকেই বড় করে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও যদি সবাই মাস্ক পরে, একটা মাস যদি আমরা ঠিক করি মাস্ক ছাড়া কোথাও যাব না; তাহলে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। লকডাউন কেন, কিছুই লাগবে না।’ চিকিৎসক প্রদীপ্ত চৌধুরীও বলেন, ‘মাস্ক পরা নিয়ে অনীহা আছে এখনও। এটা পরতে হবে। সন্দেহ হলেই নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।’ অধিকাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারলে সংক্রমণ-মৃত্যুর গতি ঠেকানো যাবে বলে মনে করেন ডা. অসীম কুমার।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তারপরও যদি হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়, একটি এলাকায় শত শত মানুষ সংক্রমিত হয় এবং তাদের অবস্থা যদি খারাপ হয়, সেটা সামাল দেওয়া খুব কঠিন। সেজন্য হাসপাতালসহ সব জায়গায় ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এমন রোগী যেন না থাকেন, যাদের অঙিজেনের মাত্রা ৯৪ এর বেশি। সামান্য অসুস্থতা নিয়ে যেন কেউ বেড দখল করে না রাখে। হাসপাতালের ভেতরের ব্যবস্থাপনাটা আরও বেশি ডায়নামিক করা দরকার।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল লঘুচাপ
পরবর্তী নিবন্ধমসলার বাজারে স্বস্তি