করোনায় ফের পেশা পরিবর্তন

সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর রাহাত্তারপুল এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। পেশায় তিনি ছিলেন বাসের হেল্পার। লকডাউনে সরকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিলে বেকার হয়ে পড়েন। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা, বউ বাচ্চাসহ মোট ছয়জনের সংসার। নিরুপায় হয়ে তাই বনে যান মৌসুমী লেবু বিক্রেতা। ওয়াসার মোড়ে ঝুঁড়িভর্তি লেবু নিয়ে বসেছেন সেলিম। রমজান মাসে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়, তাই আপাতত তিনি লেবু বিক্রি করছেন। জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার দুপুরে তিনি বলেন, সারাদিন একশ জোড়া লেবু বিক্রি করলে তিনশ থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সেগুলো দিয়ে কোনোভাবে সংসারের খরচ চালাই। সরকার লকডাউন দিয়েছে ঠিক, কিন্তু আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কোনো সাহায্য-সহায়তা রাখেনি। ঘরের বউ বাচ্চাদের তো আর না খাইয়ে রাখতে পারি না।
অপরদিকে আবুল হোসেন পেশায় ছিলেন হোটেল বাবুর্চি। লকডাউনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ। জন্মের পর থেকে এই একটি কাজই শিখেছেন। প্রথম তিনদিন ঘরে বসে ছিলেন। হাতে এমন কোনো সঞ্চয় নেই যে মাস খানেক বসে খাবেন। তাই উপায়ন্তর না দেখে এক বন্ধুর পরামর্শে নেমে পড়েন রিকশা নিয়ে। এখন যেহেতু সড়কে গণপরিবহন চলছে না, তাই রিকশা চালিয়ে আয়-রোজগার খুব একটা খারাপ হচ্ছে না। আবুল হোসেন বলেন, হোটেল মালিক বলেছেন, আপাতত গ্রামের বাড়ি চলে যেতে। গত বছরও এমন সমস্যায় পড়েছিলাম। সেই সময় গ্রামে কৃষিকাজ করেছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে কাজ নেই। তাই চিন্তা করলাম, পরিবারের খরচ তো যোগাতে হবে। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন চারশ-সাড়ে চারশ টাকার মত আয় হচ্ছে। তা দিয়ে কোনোমতে কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি।
শফিউল আলম পেশায় প্রাইভেট কার চালক। নগরীর খুলশীতে বড় এক কর্তার প্রাইভেট কার চালান। লকডাউন শুরুর পর আপাতত তাকে কাজ থেকে ছুটি দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে তাই নেমে পড়েন মাস্ক-স্যানিটাইজার বিক্রির কাজে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে চাদর বিছিয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। শফিউল আলম বলেন, আপাতত কাজ নেই। তাই মালিক ছুটি দিয়েছেন। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলাম। লকডাউন কখন শেষ হয়, তা তো ঠিক নেই। তাই চিন্তা করলাম, বসে থেকে কি লাভ। কিছু করা যায় কিনা। সেই চিন্তা থেকেই ভ্রাম্যমাণ মাস্ক-স্যানিটাইজারের ব্যবসা করছি। এখন পর্যন্ত বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। শুধু মোহাম্মদ সেলিম, আবুল হোসেন কিংবা শফিউল আলম নয়, এরকম আরো মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন। নিজের ও পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেশা পরিবর্তন করে আয় রোজগারের নতুন খাত তৈরি করছেন তারা।
বিভিন্ন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ বাধ্য হয়েই পেশা পরিবর্তন করছে। পুরোনো ব্যবসা বা চাকরিতে জীবিকা নির্বাহ না হওয়ায় নতুন পেশায় যুক্ত হতে হচ্ছে। মানুষের এ পরিবর্তনের সঙ্গে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উত্তরণকে ত্বরান্বিত করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটাইগার বোলারদের সামনে কঠিন পরীক্ষা আজ
পরবর্তী নিবন্ধবোরো ধানে ভালো ফলন