করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে টিকা কতটা কাজ করে

| রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

সব ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে স্বভাবতই বদলাতে থাকে, করোনার ক্ষেত্রেও এতে কোনো ব্যতিক্রম নেই। ২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন এই ভাইরাসটি প্রথম চিহ্নিত হয়, তারপর এটির হাজার হাজার মিউটেশন হয়েছে। মিউটেশনের মাধ্যমে এভাবে যে পরিবর্তিত ভাইরাস তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ভ্যারিয়েন্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেশিরভাগ মিউটেশনের ফলে ভাইরাসটির মূল গঠনের ওপর খুব কম বা একেবারে কোন প্রভাবই আসলে পড়ে না। সময়ের সঙ্গে এটি বিলুপ্তও হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কোনো মিউটেশন এমনভাবে ঘটে, যা ভাইরাসটিকে টিকে থাকতে এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। করোনার নতুন নতুন যে ধরন ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞরা মূলত করোনার চারটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত। এগুলো হচ্ছে : আলফা (প্রথম ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে), বেটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) এবং ডেল্টা (ভারত)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই চারটি ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিত করেছে, কারণ এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি হুমকি বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দিকেই সামপ্রতিককালে বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে, কারণ এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চাইতে অনেক বড় হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। আর আলফা ভ্যারিয়েন্ট আবার প্রথম ধরা পড়া করোনাভাইরাসের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই ভারতে এপ্রিল এবং মে মাসে করোনাভাইরাসের মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছিল। এরপর এটি এখন যুক্তরাজ্যেও সবচেয়ে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আফ্রিকা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে।
যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যারা টিকা নেয়নি, তারা এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে, তাদের মারাত্মক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর ক্ষেত্রে যে ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে তা আলাদা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, কোভিডের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে একটানা কাশি, জ্বর এবং কোন কিছুর স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া। কিন্তু প্রফেসর টিম স্পেক্টর, যিনি একটি অ্যাপ দিয়ে কোভিডের লক্ষণ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন, তিনি বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের জ্বর হলেও এই ভ্যারিয়েন্টের প্রথম দশটি লক্ষণের তালিকায় স্বাদ বা গন্ধ হারানোর ব্যাপারটি নেই। বরং যুক্তরাজ্যে যারা এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন তারা মাথাব্যথা, গলা ব্যথা এবং সর্দির কথা উল্লেখ করছেন।
প্রফেসর স্পেক্টর বলেন, ফলে তরুণ বয়সী যারা ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেলায় এটি একটা বাজে ধরনের ঠাণ্ডা লাগলে যেমন লাগে, সেরকমটাই মনে হচ্ছে। এর বিপদটা হচ্ছে তারা বুঝতেই পারছে না, তাদের কোভিড হয়েছে। তারা এটিকে সাধারণ ঠাণ্ডা লেগেছে বলে মনে করে আরও বেশি মানুষের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গত ২৩শে জুন ভারত ডেল্টা প্লাস বলে আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত করেছে, যেটিকে তারা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এটিকে একটি আলাদা ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেনি।
তবে একটা সুসংবাদ হচ্ছে, সার্স-কোভিড-টু এর বিরুদ্ধে যত টিকা এখন পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কাজ করছে বলে প্রমাণ মিলছে গবেষণায়। তবে করোনাভাইরাসের আদি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এসব টিকা যত কার্যকর ছিল, নতুন ভ্যারিয়েন্টের বেলায় কিছুটা কম। বিশেষ করে যারা কেবল টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে পাওয়া ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রেজনেকার দুটি টিকাই কাজ করে। ‘সেল’ জার্নালে প্রকাশিত এত নিবন্ধে গবেষকরা বলেন, ‘এই টিকা ব্যাপকহারে অকার্যকর হচ্ছে এমন কোন প্রমাণ নেই। যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে বর্তমান প্রজন্মের টিকাগুলো কাজ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ জুন পর্যন্ত ১৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকার সবগুলো ডোজ দেয়া হয়েছে। তবে টিকা নেয়ার পরও তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭২৯ জনের কোভিড হয়েছে এবং ৬৭১ জন মারা গেছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জিওগ্রাফিক ইনসাইটস ল্যাবের প্রফেসর এসভি সুব্রমানিযাম বলেন, কেবল টিকা দিয়ে এই মহামারি থেকে কোনো দেশ বেরিয়ে আসতে পারবে না। তিনি জোর দিচ্ছেন চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে আরও বেশি নজর দেয়া, বিশেষ করে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন এবং স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ানোর ওপর।- বিবিসি বাংলা

পূর্ববর্তী নিবন্ধইথিওপিয়ায় সংঘর্ষে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ৪ লাখ মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধলংকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম অংশে অনিশ্চিত সাকিব-তামিমরা