করোনা ভাইরাস আবার চোখ রাঙাচ্ছে। নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে আমাদের দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিহ্নিত হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দরে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সাতটি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। ১১ জুন দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতার কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট এরইমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।’ ‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল–নৌ–বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। এ সময় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ৭ নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো– ১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন। ২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন। ৩. হাঁচি বা কাশির সময় নাক–মুখ ঢেকে রাখুন (কনুই বা টিস্যু ব্যবহার করে)। ৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন। ৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন। ৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না। ৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
আইসিডিডিআরবির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) তথ্যমতে, চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো করোনার নতুন দুটো সাব–ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি। যেগুলো ওমিক্রন জেএন.১–এর একটি উপশাখা। সমপ্রতি যেসব নমুনা পাওয়া গেছে, তার প্রায় সবগুলোয় এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে তারা বয়স্ক ব্যক্তি, শারীরিকভাবে দুর্বল কিংবা আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা তাদের জন্য এ ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক হতে পারে। এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এনবি.১.৮.১ নামে আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানা গেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য বেনাপোলসহ সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জোরদার করা হয়েছে। গত ২৩ মে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, এ ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এর সংক্রমণ হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
৪ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্শ্ববর্তী দেশে কোভিডের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। দেশে গত মে মাস থেকেই করোনার প্রকোপ বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা বয়স্ক, কিডনি রোগী, গর্ভবতী নারী, ক্যান্সার রোগী, হাঁপানিতে ভোগেন বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় আক্রান্ত তাদের জন্য এ ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কোভিডের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টই বয়স্ক, গর্ভবতী ও আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আবারো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার সম্ভাব্য বিস্তার রোধে অবিলম্বে পরীক্ষার সরঞ্জাম সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা বয়স্ক এবং ভিন্ন কোনো জটিল রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো বটেই, এমনকি যেসব ব্যক্তির সর্বশেষ টিকা নেওয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাঁদেরও করোনার টিকা নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেহেতু করোনার সংক্রমণ বাড়ছে সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দেশের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে। রেলওয়ের মতো অন্যান্য পরিবহনেও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যেকোনো মূল্যে করোনার সংক্রমণ কমাতেই হবে। শুরুতেই যদি এর সংক্রমণ রোধ করা না যায় তাহলে পরে বিভিন্ন উদ্যোগেও কাজ হবে না। আশা করি, করোনার বিস্তার ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর জনসচেতনতার কাজটি করতে হবে সর্বস্তরে।