ডাক্তারের পরামর্শে আমরা যে ওষুধগুলো সেবন করি সেগুলোকে বলা হয় সিনথেটিক ওষুধ। এর মধ্যে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রয়েছে, যেগুলো খাওয়ার পর অনেকের শরীরে আর কাজ করে না। কিছু ওষুধ ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আবার কিছু রয়েছে খেলেই তাৎক্ষণিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এ রকম নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে সিনথেটিক ওষুধে। এজন্য বর্তমান সময়ে প্রচলন শুরু হয়েছে বিকল্প প্রাকৃতিক ওষুধের। এর কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং খাবার হিসেবেও উপযুক্ত।
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আতিয়ার রহমান। করোনাভাইরাসের বিকল্প প্রাকৃতিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, সব রোগেরই একটা প্রতিষেধক প্রকৃতিতে থাকে। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দিকে থেকে সমৃদ্ধশালী। করোনার প্রতিষেধকের জন্য বিকল্প প্রাকৃতিক ওষুধ আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি। সেটা নিয়ে কাজ করছি।
ল্যাবরেটরি অব অলটারনেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসার্চ নামে একটি ল্যাবে এ নিয়ে গবেষণা করছেন ড. আতিয়ার। তিনি আজাদীকে বলেন, আমাদের আশেপাশে এবং বনে-জঙ্গলে এমন কিছু গাছপালা রয়েছে, যেগুলো ঔষধি গুণ সম্পন্ন। গাছপালা ছাড়াও অনেক পোকামাকড় ও ছোট ছোট প্রাণী আছে, যেগুলোর ঔষধি গুণ রয়েছে। যা সম্পর্কে আমরা জানিই না। আবার জানলেও প্রয়োগের ভিন্নতার কারণে সুফল পাওয়ার পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো এর ভালো গুণগুলো সায়েন্টিফিক কমিউনিটির সামনে তুলে ধরা। সিনথেটিক বা নরমাল ওষুধের মধ্যে একটা গুণ থাকে। এতে ভালো হয়, আবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে। কিন্তু গাছপালা থেকে তৈরি ওষুধের অনেকগুলো গুণ থাকে। এ রকম একটি ওষুধে যদি ১০টি গুণ থাকে, একটি ক্ষতি করতে চাইলে অন্য নয়টি গুণ সেটাকে প্রতিহত করে। এছাড়া এর সবচেয়ে ভালো গুণ হলো এতে কোনোরকম পার্শপ্রতিক্রিয়া থাকে না।
ড. আতিয়ার বলেন, এর চেয়ে বড় কথা, এর মধ্যে অনেক গাছপালা বা লতাপাতা আছে, যা আমরা সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেতে পারি। যার কারণে আমরা এগুলোকে ওষুধ হিসেবে না ধরে খাবার হিসেবে খেতে পারি। খাদ্যের অভাব মিটবে, সাথে রোগের প্রতিষেধকও। যেটাকে আমরা বলি ‘ফাংশনাল ফুড’। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে নতুন নতুন প্লান্ট সোর্স বা ঔষধি খাবার খুঁজে বের করা। এরপর সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত করা। এর জন্য ল্যাবে আমরা যতরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন করে থাকি। সর্বশেষ ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে দেখি ঠিক আছে কিনা। এ রকম বিকল্প প্রাকৃতিক ওষুধ তৈরিতে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি গাছপালা ব্যবহার করা হচ্ছে।
করোনা ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে বিকল্প প্রাকৃতিক ওষুধ নিয়ে গত ১০-১২ বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন ড. আতিয়ার রহমান। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শামুক আমাদের দেশে খুবই পরিচিত একটি প্রাণী। বিভিন্ন দেশে এটাকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শামুকের ভেতরের নরম অংশ বা ফ্লেশটা একটি ঔষধি খাবার। বর্তমানে আমাদের দেশেও শামুক সংরক্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে এটি সংরক্ষণের জন্য সরকার পদক্ষেপও নিয়েছে। এ রকম অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো আমরা খাই, কিন্তু ঔষধি গুণাগুণ জানি না; যার কারণে মাত্রা ঠিক না থাকায় সঠিক ফল পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এসব গবেষণা সঠিকভাবে হচ্ছে না। অনেকে নিজের প্রয়োজনে সামান্য করে আর করছেন না। তাই বিষয়টির শেষ পর্যন্ত যাওয়া যায় না বা সর্বশেষ সুফলটা পাওয়া যায় না। আমরা একটি গাছ নিয়ে প্রায় আট বছর ধরে কাজ করেছি। প্রথম এটা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভারত সেটা থেকে ওষুধ বানিয়েছে ‘এনটিন প্লানাটারি জেল’, যেটা ব্যথার জন্য ব্যবহার করা হয়।












