করোনার নতুন ধরনকে মোকাবেলা করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে

| মঙ্গলবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনকে নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। আমাদের বাংলাদেশেও এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছে লোকজন। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা উদ্বেগজনক হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয়েছে সাউথ আফ্রিকাতে। সেখান থেকেই অন্যদেশগুলোতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিস-এনআইসিডি জানিয়েছে, তারা ওমিক্রন আক্রান্তদের শনাক্ত করতে পেরেছে। অনেকের জিন সিকোয়েন্স করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ। তিনি বলেন, ‘ভাইরাসটি যত ছড়াবে তার পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে। দেখা দিবে নতুন নতুন রূপও।’
ওমিক্রনের ঝুঁকি বিষয়ে আলোচনা করতে জেনেভায় বৈঠকের পর বৈঠকে বসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচও বলছে, ওমিক্রনে করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীরাও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য দেশগুলোকে নজরদারি বৃদ্ধি, ধরন শনাক্ত করার জন্য জিন সিকোয়েন্স কার্যক্রম চালু করা, শনাক্ত হলে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ডব্লিউএইচও বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভাইরাসের ধরনটি নিজেকে অসংখ্যবার রূপান্তর করেছে। এর কোন কোনটির বৈশিষ্ট্য ভয়ের কারণ তৈরি করছে। তবে পিসিআর পরীক্ষায় এখনও ওমিক্রনকে শনাক্ত করা যাচ্ছে।
ওমিক্রন নিজেকে যেভাবে বদলে ফেলেছে তাতে বিদ্যমান টিকাগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরো তথ্য সংগ্রহ করছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির কোভিড-১৯ বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ডেভিড নাবারো গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাউথ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, টিকার কারণে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি সবাই মিলে এতদিনে গড়ে তুলতে পেরেছিল সেটি ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা এই ভাইরাসটির আছে বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। এটা শোনার পর যে কোনো মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।
এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন তাঁর দেশের জনগণকে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন যে নতুন বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এসেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। রোববার দেশের আট বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু ওমিক্রন নতুনভাবে আবার সারা বিশ্বে দেখা দিচ্ছে, এখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে হবে। আর শীতকালে প্রাদুর্ভাবটা বাড়ে। এমনি সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে একটু সর্দি, কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলে মাস্কটা ব্যবহার করবেন। খুব বড় সমাগমে যাবেন না। সেখান থেকে একটু নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখবেন। আর কোনো বড় সমাবেশ যেন না হয়, সেটার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিটা সবাই মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাচ্ছি।’
ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমিটির তরফ থেকে।
গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে না পারলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে সহায়তা করছে। আর তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিলে তা ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে।
মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দ বাজেটে রেখেছি। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমাদের বাজেটে রাখা আছে। এর বাইরেও যদি প্রয়োজন হয় আমরা খরচ করতে পারব। সেভাবে আমাদের উদ্যোগ নেওয়া আছে। তাছাড়া আমরা আলাদা একটা ফান্ডও তৈরি করেছি। কাজেই সেভাবেই আমরা মানুষের চিকিৎসা সেবাটা দিয়ে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ যেভাবে আমাদের দিয়েছেন, কিংবা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেভাবে সমাবেশ বন্ধ করার পরিকল্পনা নিতে বলা হচ্ছে, তা আমাদের ভাবনায় আনতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা বা বন্ধ করা- দুটোই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সব চাকা সচল রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে