চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) গত অর্থ বছরে (২০১৯-২০২০) ৭২ হাজার ৫০৮টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। এর বিপরীতে চলতি অর্থ বছরের (২০২০-২০২১) প্রথম পাঁচ মাসে তথা গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেছেন ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ বছরের বাকী সাত মাসে পুরাতন সব লাইসেন্স নবায়ন করা হবে। একইসঙ্গে নতুন ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যাও বাড়বে। অথচ ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ইস্যুর বিপরীতে গত অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৯৯৭ টি ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। দুই অর্থ বছরে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও ইস্যুর বিষয়টি ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যা করোনা পরিস্থিতির কারণে গত অর্থ বছর স্থবির ছিল। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধাক্কা লাগে তাতে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী ছিটকে পড়েছিলেন। তারা পেশা গুটিয়ে শহর ছাড়েন। ফলে ওই সময় কমে যায় ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুও। তবে গত কয়েক মাসে পুরনো সংকট ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছেন ব্যবসায়ীরা। তাই বাড়ছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নও। বলা যায়, সংকট কাটিয়ে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তাই গতি আসছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ইন্টার্নাল ট্রেড স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুল হক শাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিকভাবে আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম, যেহেতু করোনা সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না। এখন করোনা কিভাবে মোকাবিলা করবো সেটা সর্ম্পকে ধারণা হয়েছে, সরকারও ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে এবং সবকিছু শক্তভাবে হ্যান্ডেল করেছে। এখানে সরকারের পলিসি কাজে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে পেয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে তথা উৎপাদন, সার্ভিস ও ট্রেডিং খাতে যে ভয় ছিল তা দূর হচ্ছে। সবমিলিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য।
অবশ্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সংখ্যা বাড়লেও ব্যবসা-বাণিজ্যে পুরোপুুরি গতি আসেনি বলে জানিয়েছেন টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য যে রকম হওয়ার কথা সেরকম হচ্ছে না। তারপরও সবাই ট্রেড লাইসেন্স করছে। কারণ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের দরকার হয়। জায়গা কিনলেও প্রয়োজন হয় অনেক সময়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে মাঝখানে খারাপ অবস্থা ছিল। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ছে। এতে বুঝা যায় ধীরে ধীরে আগের সংকট কাটিয়ে ওঠছেন ব্যবসায়ীরা। আবার ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। স্পট ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি। মনিটরিং জোরদার করেছি।
আদর্শ কর তফসিল-২০১৬ অনুযায়ী, নগরে যে কোনো বৈধ ব্যবসার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। আবার প্রতি অর্থ বছর এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা আছে আইনে।
বাড়ছে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু : চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৯১ জন ব্যবসায়ী একেবারে নতুন ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। যারা সম্পূর্ণ নতুন করে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। ওই হিসেবে চলতি অর্থ বছরে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৩৫৮ জন নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। অথচ ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৪৫৪ টি নতুন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছিল। অর্থাৎ গত অর্থ বছরে প্রতি মাসে নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হন মাত্র এক হাজার ৩৭ জন।
এদিকে চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে পুরাতন ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৫২ হাজার ৮১১ টি। অথচ গত অর্থ বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে নবায়ন করা হয় ৫০ হাজার ৫৪টি। এছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে নতুন ও নবায়নসহ ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছিল ৮০ হাজার ৫১ টি। বিপরীতে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে নবায়ন করা হয় মাত্র ৬০ হাজার ৫৪টি।