চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত ২২ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বিষয়ে আপাতত কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই সিদ্ধান্তের কথা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো চিঠিতে একশ’র অধিক অতিথির উপস্থিতি নিষেধ করার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়, ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ধারণ ক্ষমতার চার ভাগের এক ভাগের বেশি অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা যাবে না। প্রবেশের পূর্বে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কারসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে যথাযথ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে (ন্যূনতম ৩ ফুট)। অতিথিকে অবশ্যই মাস্ক পরে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ ও বাহিরের জন্য আলাদা পথ করতে হবে। নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ ১৯৮৪ সালের অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৬০ সালের দণ্ডবিধি আইন ও ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশে হঠাৎ সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ বিষয়ে এখনো সরকারি বা কেন্দ্রীয় উদ্যোগে কোন পরিসংখ্যান বা জরিপ, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মতো কাজগুলো করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক মনে করেন, সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে ইউকে ভেরিয়ান্ট বা যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ভেরিয়ান্ট পাওয়া গিয়েছিল সেটি ছড়িয়ে পড়া। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান যে, এটি ৭০ শতাংশ বেশি হারে বিস্তার ঘটাতে পারে। সেই সাথে এটি শিশুদেরও আক্রান্ত করতে সক্ষম। তাঁরা বলেন এই ভেরিয়ান্টের সংক্রমণ জটিল হওয়ার শঙ্কা বেশি এবং মৃত্যুহারও বেশি। তাঁরা মনে করেন এরকম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি অনেক প্রবাসী রয়েছেন যাদের আসা বন্ধ করা হয়নি। যারা এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন যথার্থভাবে করা হয়নি, কারো তিনদিন, কারো চারদিন, কারো সাতদিন হিসেবে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনের নিয়মও মানা হয়নি। তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশেছে। তাঁরা বলেন, সমপ্রতি যে সংক্রমণ বাড়ছে তার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি। অন্য জেলাতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে নওগাঁর কথা তুলে ধরেন। ওই জেলাটিতে বেশ কয়েক দিন ধরে কোন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। তাঁদের মতে যেসব জেলার সাথে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীদের ফেরার সংশ্লিষ্টতা বেশি, সেসব জেলাতে করোনা সংক্রমণের হারও বেশি। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন, শীতকালে সংক্রমণ তেমন না বাড়ার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও অংশগ্রহণ, এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়ে উদাসীনতা ছিল পুরো দেশ জুড়েই। করোনাকালীন সময়ে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা বলেন, “যখন সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান এরকম করে তখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর প্রতিক্রিয়া হয়। যার কারণে বিয়ে-সাদি, ওয়াজ মাহফিল, ঘুরতে যাওয়ার মতো কাজকর্ম চলেছে।”
কিন্তু বিধি নিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে যা বলা হচ্ছে, তাতে স্ববিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারি উদ্যোগেই উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশের আয়োজন চলছে। শারীরিক দূরত্বের কথা যতই বলি না কেন, যে কোনো আয়োজনে জনসমাগম হবে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, আবার তাঁরাই যদি তার আয়োজক হয়, তাহলে সমস্ত উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আমাদের অর্থনীতিকেও সচল রাখতে হবে। আবার করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।