করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় নতুন একটি ওষুধ নিয়ে বড় ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছে। ওষুধটির নাম মলনুপিরাভির। বিশেষজ্ঞরা এই ওষুধটিকে দেখছেন করোনা মহামারি মোকাবেলায় মোড় পরিবর্তনকারী কিংবা গেমচেঞ্জার ড্রাগ হিসেবে। তারা বলছেন, এই ওষুধ পরিস্থিতি বদলাতে সাহায্য করবে। কোভিড চিকিৎসায় মলনুপিরাভির বিশ্বের প্রথম মুখে খাওয়ার ওষুধ। এটি ঘরে বসেই সাধারণ যেকোনো ট্যাবলেটের মতো খাওয়া যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ওষুধটি খেলে রোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
বিডিনিউজ জানায়, কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় এই ক্যাপসুল ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশের সব হাসপাতালে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগীদের মৃদু ও মাঝারি ধরনের লক্ষণ থাকলে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি রোগীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তবে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের এই ওষুধ দিতে মানা করেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক, শার্প অ্যান্ড ডোম এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস এই ওষুধটি তৈরি করেছে। বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ঔষধটির জরুরি ব্যবহার, বিপণন ও উৎপাদনের অনুমোদন দেয়ার পর এরই মধ্যে ওষুধটি বাজারে নিয়ে এসেছে তিনটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, শরীরের ভেতরে যখন করোনাভাইরাস প্রবেশ করে তখন তার অনেক কপি তৈরি করতে হয়। এই কপি করার মূল প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে মলনুপিরাভির। ড্রাগটি বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি তৈরি করে, যাতে জিনগুলো বুঝতে না পারে যে সে কোন প্রোটিন তৈরি করবে। যখন বিভিন্ন প্রজন্মে এই ভাইরাস তৈরি হতে থাকে তখন ত্রুটির সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
তিনি বলেন, ভাইরাসটি তখনও বুঝতে পারে না তার ভেতরে কী পরিমাণ ত্রুটি প্রবেশ করেছে। কিন্তু ভাইরাসটি মনে করে যে সে বুঝি তৈরি করেই যাচ্ছে। একটা সময় ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। মলনুপিরাভিরের যে রাসায়নিক কাঠামো সেটা দেখতে ভাইরাসের কপি তৈরি করার টেম্পলেট বা নকশার মতো। এ কারণে সে এটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।
কত দ্রুত কাজ করে : বিজ্ঞানীরা বলছেন, মলনুপিরাভিরের রাসায়নিক পদার্থগুলো দ্রুত রোগীর রক্তের ভেতরে গিয়ে ভাইরাসকে নির্মূল করার কাজ শুরু করে দিতে পারে। প্রাণীর ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১২ ঘণ্টা পরেই এই ওষুধটিকে বেশ কার্যকর দেখায় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি ভাইরাসকে শূন্য করে ফেলতে পারে।
মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, তিন দিন পর ভাইরাস অনেক কমে গেছে, কিন্তু ভাইরাসটি পুরোপুরি ধ্বংস হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন। আঠারো বছরের নিচে কারো ওপর এই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। গর্ভবতী নারীকেও এই ওষুধটি দেওয়া হয়নি। ফলে তাদের শরীরে এটি কাজ করবে কিনা সেটা পরিষ্কার নয়।
রোবেদ আমিন বলেন, যারা বয়স্ক, যাদের অন্তত একটি রিস্ক ফ্যাক্টর ছিল, তাদের অসুস্থতা যখন মৃদু থেকে মাঝারি, তাদের শরীরে এই সময়ে ওষুধটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে বলে পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে। কিন্তু কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন এই ওষুধটি কাজ করে না।
টিকার বিকল্প নয় : ডাক্তাররা বলছেন, কোভিড টিকা নেওয়া সত্ত্বেও কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার উপসর্গ যদি মৃদু থেকে মাঝারি হয় তাহলে তারাও এই ওষুধটি সেবন করতে পারবেন। তবে চিকিৎসকরা এই ওষুধটিকে টিকার বিকল্প হিসেবে না দেখার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।