গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, “আজকে বিএনপিও করোনাগ্রস্ত। বিএনপি এতটা করোনাগ্রস্ত যে তারা রাস্তায় নামতে পারে না। তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।”
দেশব্যাপী ‘নৈরাজ্য ও দুর্নীতির’ প্রতিবাদে জোরালো আন্দোলন না করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুধু মানববন্ধন কর্মসূচি দেওয়ায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
আজ শুক্রবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিশু ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে যোগ দিয়ে তিনি আরো বলেন, “বিএনপি এখন এত দুর্বল হয়েছে যে তাদের সীমানা এসে গেছে প্রেসক্লাবের সামনে ৫০ জনের একটা মানববন্ধন।” বিডিনিউজ
শিশু ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘গণতন্ত্র ফোরাম’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকা জাফরুল্লাহর ভাষায়, বিএনপি সক্রিয় না হলে সামনে দলটির আরও ‘দুর্দিন’ আসছে।
তিনি বলেন, “আজকে বিএনপি চাইলে একশ ওয়ার্ডে যেকোনো সময় অন্তত একশজন লোককে নামাতে পারে। করোনা হলে মানুষের চিন্তাচেতনা হারিয়ে যায়, বিএনপিরও তাই হয়েছে। বিএনপি যদি আজকে না জাগে, তাহলে বিএনপির আজকে খুব খারাপ অবস্থা হবে।”
অতি দ্রুত বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার পক্ষে মত দিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়াকে দেশবাসী এখনও ভালোবাসে। (কারাগারের) বাইরে থাকা অবস্থায় দ্রুত উনার দরকার হবে কাউন্সিল মিটিং করা।”
সরকার সাজা স্থগিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সাময়িক মুক্তি দিলেও তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সেই প্রসঙ্গ টেনে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়াকে তার পছন্দসই হাসপাতালে চিকিৎসা করতে ‘দেওয়া উচিৎ’। আজকে তারা খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে আসতে দিয়েছেন কিন্তু চিকিৎসা করতে দেবেন না, এটা কোন ধরনের কথা? তারা পশু হয়ে না গেলে, তারা মানবতা না হারালে এ জাতীয় কাজ করতে পারেন না। আমার কোনো ভালো কথা তাদের কানে ঢুকে নাই, চোখে দেখে নাই। তবুও আবার আমি বলছি, দায়িত্ব হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে, মনে করি অনতিবিলম্বে যেখানে উনি চিকিৎসা করাতে চান, তাকে চিকিৎসা নিতে দেওয়া উচিৎ।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সরকারের সমালোচনা করে আসা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “ভারতের ব্যবহার যেটা দেখছি, ভুটান থেকে দেড় টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে আমাদের কাছে বিক্রি করে ছয় টাকা দিয়ে। আমরা ভারতের পদলেহন আর কত দিন করব? আজকে ভারতকে বলতে হবে, তোমরা সতর্ক হও। তোমরা যদি সতর্ক না হও, তাহলে তোমাদের ট্রানজিট বন্ধ, ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ।”
‘দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ সরকারকে হুঁশিয়ার করতে জনগণকে পথে নামার আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে। অন্যায় এনাফ করেছেন, এবার থামেন। এভাবে দেশ চলতে পারে না। আজকে প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতি দুর্দশায় আছে। আমরা যদি এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই, বের যদি না হই…। আজকে এটা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ, আমি দেখি আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগই তাকে ‘অবহেলা’ করছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপিপন্থী এই পেশাজীবী নেতা।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর একটা ভালো কথা তারা শুনছে না। বঙ্গবন্ধু জনগণের হাতে তার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। এখন সেটা তারা মুখেও আনে না।”
প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড রাজধানীকেন্দ্রিক করে রাখার সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “তারা সবকিছুকে ঢাকাকেন্দ্রিক করে রেখেছে। ফলে কী হয়েছে? আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে অন্তরীণ হয়ে আছেন। তার চারিদিকে রাজনীতিবিদরা নন, আমলারা আছেন…।”
সব দল-মতকে নিয়ে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সবাইকে নিয়ে বসেন, আপনি ঘরের অন্ধকারাচ্ছন্ন কুঠুরি থেকে বের হয়ে আসেন। তাহলে আমাদের সুখ-দুঃখটা আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারবেন।”