করোনাকালে চট্টগ্রামেই প্রথম টুর্নামেন্ট

মুজিববর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন ৯ অক্টোবর

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৭ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

কথায় আছে যে পথ দেখায় সে থাকে এগিয়ে। চট্টগ্রাম অনেক দিক থেকে এগিয়ে ছিল অতীতে। চট্টগ্রাম বরাবরই এগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছে। এবারও এগিয়ে থাকছে চট্টগ্রাম। আর তা হচ্ছে করোনাকালে খেলাধুলা মাঠে নামানোর ক্ষেত্র। মহামারী করোনার কারণে গত সাত মাস ধরে দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে।
ঢাকায় কেবল জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেছে। আর নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে অনুশীলন ম্যাচ খেলছে। তাও অনুশীলনেরই অংশ। কিন্তু দেশে এই করোনাকালে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট মাঠে নামাতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজন করতে যাচ্ছে মুজিব শতবর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেখানে চারটি দলের হয়ে অংশ নিচ্ছে চট্টগ্রামের প্রায় ৯২ জন ফুটবলার। যারা জাতীয় দল থেকে শুরু করে খেলছে দেশের সর্বোচ্চ লিগসমূহে।
মুজিববর্ষের সব কর্মসূচি সরকার স্থগিত করলেও এই উৎসবের আড়ালে দেশে সবার আগে ফুটবল মাঠে নামাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাও আবার যেনতেন টুর্নামেন্ট নয়। একেবারে সরকারি সব শর্ত মেনে সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তবেই মাঠে গড়াচ্ছে মুজিববর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেখানে খেলবে চারটি দল। আর চারটি দলও আবার সংস্থার প্রায়ত চার সাধারণ সম্পাদকের নামে। যাদের মেধা, মনন, ঘামে, শ্রমে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজকের পর্যায়ে। ডা. কামাল এ খান, রফিক আহমদ চৌধুরী, এম.এ.তাহের (পুতু) এবং এস এম কামাল উদ্দিন এই চার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের নামে চারটি দল নিয়ে ফুটবলারদের মাঠে নামাতে যাচ্ছে সিজেকেএস। গত সাত মাস মাঠে গড়ায়নি কোন খেলাধুলা। ফলে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ যেন পরিণত হয়েছিল ঘাসের বনে। তবে এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এখন পরিণত হয়েছে সবুজ গালিচায়। যেখানে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ফুটবলাররা দেখাবে তাদের ফুটবল শৈলী। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম কিংবা শাখাওয়াত রনি, সোহেল এবং সজিবদের মতো জাতীয় তারকারা যেমন রয়েছে তেমনি এই টুর্নামেন্টে আছে চট্টগ্রামের একেবারে তরুণ ফুটবলাররাও। বলতে গেলে এ যেন ফুটবলারদের মিলনমেলা।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি সন্ধ্যায় উদ্বোধন করবেন এই টুর্নামেন্টের। সবগুলো ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে ফ্লাডলাইটের আলোয়। বলতে গেলে এই টুর্নামেন্ট চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার জন্য এক রকম এসিড টেস্ট। যদিও সে এসিড টেস্ট উৎরাতে পুরোপুরিই প্রস্তুত জেলা ক্রীড়া সংস্থা। যদিও সেজন্য তাদের বাড়তি খাটুনি খাটতে হচ্ছে।
টুর্নামেন্টে দেশের অনেক তারকা ফুটবলাররা খেললেও মাঠে দর্শকদের নিরুৎসাহিত করা হবে বলে জানালেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন। তারপরও যারা মাঠে আসবেন ফুটবলের টানে তাদের বসার জন্য গ্যালারিতে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে দুইজনের মাঝখানে অন্তত তিনফুট দূরত্ব বজায় থাকবে। তাছাড়া গতকাল থেকে শুরু হয়েছে টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ফুটবলারদের করোনার নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম। যাদের ফলাফল নেগেটিভ আসবে তারাই কেবল খেলতে পারবে এই টুর্নামেন্টে। দল গুলোও এরই মধ্যে নিজেদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। এখন তারাও ক্ষণ গণনা করছে মাঠে নামার। কারণ সাত মাস পর মাঠে নামতে পারাটাই যে সবচাইতে বড় স্বস্তির ফুটবলারদের জন্য। অবশ্য এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে দেশের খেলাধুলার অঙ্গনে যেন নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। প্রায় ২৭ লাখ টাকা বাজেটের এই টুর্নামেন্ট আগামী ৯ অক্টোবর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৮ অক্টোবর।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের আদ্যপান্ত জানিয়ে দিয়েছেন টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন, সহ সভাপতি দিদারুল আলম চৌধুরী, টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মেহেদী হাসান, টুর্নামেন্টের মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস। এসময় উপস্থিত ছিলেণ সিজেকেএস সহ-সভাপতি এ.কে.এম. এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল), সিডিএফএ এর সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, সিজেকেএস যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মো. মশিউর রহমান চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ.ন.ম. ওয়াহিদ দুলাল, গোলাম মহিউদ্দীন হাসান, অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. জমির উদ্দীন (বুলু), নাসির মিঞা, প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, মো. হারুন আল রশীদ, রেখা আলম চৌধুরী, মনোরঞ্জন দে প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এই টুর্নামেন্ট নিচক কোন একটি টুর্নামেন্ট নয়। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে যেমনি স্মরণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে তেমনি সম্মানিত করা হচ্ছে চারজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠককে। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ফুটবলারাও পাচ্ছে যোগ্য পারিশ্রমিক। একই সাথে কোচ এবং কোচিং স্টাফরাও পাবেন তাদের যোগ্য সম্মানী। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম থেকেই যেন শুরু হচ্ছে করোনাকালে দেশের খেলাধুলার যাত্রা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে চোর সন্দেহে পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআরও ৩০ জনের মৃত্যু