করোনাকালে পৃথিবী থমকে গেলেও লায়ন্সের সেবা কার্যক্রম থেমে নেই বলে মন্তব্য করে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর গভর্নর লায়ন ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, করোনাকালে রাতের আঁধারে অভাবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া কিংবা অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করা মানুষের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়া, পরিবার পরিজন যখন পালানোর পথ খুঁজছিলেন তখন পাশে দাঁড়াচ্ছিলেন লায়ন্স সদস্যরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা অভাবী এবং দুস্থ মানুষগুলোকে কিছুটা সহায়তা দেয়ার জন্য নিরন্তরভাবে কাজ করেছেন। চোখের চিকিৎসা কিংবা সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যেই নজির লায়ন সদস্যরা রেখেছেন তা অনন্য। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে লায়ন্স করোনা সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে লায়ন্স গভর্নর ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেন, চট্টগ্রামের সব সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারবো না। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন সমস্যা সমাধানের মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা শুধু আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব দায়বোধ থেকেই আমাদের সর্বোচ্চটা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য করে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের এই চেষ্টা অতীতে যেমন ছিল, করোনাকালেও ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে।
লায়ন্স গভর্নর ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন। আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের ‘অক্টোবর সেবা মাস’ উপলক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লায়ন ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিবছর জুলাই মাসের ১ তারিখ একজন নতুন গভর্নর একবছরের জন্য এ জেলার দায়িত্ব নেন। সে হিসেবে গত ১ জুলাই থেকে আমি জেলার ৮৩টি ক্লাব নিয়ে ‘সবার উপরে মানবতা (হিউমিনিটি এভাব অল) ডাক দিয়ে দুস্থ অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তিনি লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল চট্টগ্রামের একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা এই হাসপাতালের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের চোখের অপারেশনসহ নানাবিধ চিকিৎসা দিয়ে থাকি। অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে বিত্তবানেরা এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গরীব ও দুস্থদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আমরা গ্রামে গঞ্জে ক্যাম্প করার মাধ্যমেও প্রচুর রোগী শনাক্ত করি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকি। চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনে একটি স্বতন্ত্র আই ইনস্টিটিউট করার কার্যক্রম চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো চট্টগ্রাম উপকৃত হবে। এখানে তৈরি হবে আই স্পেশালিস্ট, নিয়োগ পাবে অনেক লোকবল, সেবা পাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পুরো চট্টগ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। এককথায়, বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন ভবনকে ঘিরে একটি ১৫ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রকল্পটি হয়তো দীর্ঘমেয়াদী, কিন্তু সিএলএফ–এ যে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা রয়েছে তাকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে, আরো বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন সুচিন্তিত পরিকল্পনা। এ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা গেলে এটিই হবে দেশের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সকল আঙ্গিকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্ট, ওয়ান ক্লাব ওয়ান চাইল্ড নামে তিটি ভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে মেধাবী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। যতদিন তাদের লেখাপড়া শেষ হবে না ততদিন পর্যন্ত এ বৃত্তি চালু থাকবে। পাশাপাশি প্রতিবছর বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চালু করা লায়ন্স করোনা সাপোর্ট সেন্টারকে একটি অনন্য অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অসংখ্য করোনা আক্রান্ত মানুষ স্বস্তিতে চিকিৎসা নিতে পেরেছেন। লায়ন্স ওয়েল ফেয়ার ফান্ডও এই জেলার একটি সুন্দর উদ্যোগ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সদ্য প্রাক্তন গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, লায়ন সদস্যরা তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটা দিয়েই মাঠে রয়েছেন। তারা তাদের সামর্থ্যের সবটুকুই করেন। সমাজের বিত্তবান মানুষগুলোও যদি এভাবে এগিয়ে আসতেন তাহলে সমাজ অনেক বেশি বাসযোগ্য হতো। লায়ন কামরুন মালেক বলেন, পৃথিবীতে সবাইকে সাথে নিয়ে বেঁচে থাকার যেই আনন্দ তা লায়নিজম আমাদের শিখিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য লায়ন সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজের কম সৌভাগ্যবান মানুষগুলোকে একটু সহায়তা করলে তাদের মুখে একটু হাসি ফোটালে অন্তরে যেই শান্তি পাওয়া যায় দুনিয়াতে তা অতুলনীয়। এই সুখ একবার যারা পান তারা বারে বারে সেবা নিয়ে, সহায়তা নিয়ে মানুষের দুয়ারে ছুটে যান। চট্টগ্রামের লায়ন্সের বর্তমান নেতৃত্ব অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সেবার জগতে পতাকা উড়াবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান লায়ন শাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী লায়ন হাসান আকবরের সঞ্চালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে সদ্যপ্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক বক্তব্য রাখেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অক্টোবর সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রথম ভাইস গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষ, দ্বিতীয় জেলা গভর্নর লায়ন সামশুদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকী, প্রাক্তন গভর্নর লায়ন এম এ মালেক, লায়ন নাজমুল হক চৌধুরী, লায়ন কবির উদ্দীন ভুঁইয়া, কেবিনেট সেক্রেটারী লায়ন অশেষ কুমার উকিল, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন আশরাফুল আলম আরজু, অক্টোবর সার্ভিস কমিটির সেক্রেটারী লায়ন আবু মোরশেদ, জিএলটি লিডার লায়ন জি কে লালা, জিএমটি লিডার লায়ন আরিফ আহমেদ, জিএসটি লিডার লায়ন শওকত আলী, এলসিআইএফ কোঅর্ডিনেটর লায়ন মনির আহমদ, রিজিয়ন হেডকোয়ার্টার লায়ন ওসমান গনি, লায়ন এস দোহা, লায়ন তপন কান্তি দত্ত, লায়ন ডা. দেবাশীষ দত্ত, লায়ন মোহাম্মদ এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, লায়ন এস কে নন্দী, লায়ন মোসলেহউদ্দিন অপু, লায়ন হারুন ইউসুফ চৌধুরী, রিজিয়ন হেডকোয়ার্টার লায়ন মীর্জা আকবর আলী চৌধুরী, লায়ন রাজীব সিনহা, লায়ন মোহাম্মদ শহীদ সারওয়ার ম্যাক্সিম, লায়ন হুমায়ুন কবির, লায়ন ইমতিয়াজ, লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য, লিও জেলা সভাপতি মোহাম্মদ হাকিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।