কয়লা পরিবহনে ভাড়া কমলো লাইটার জাহাজে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারি উদ্যোগের সহযোগী হচ্ছেন জাহাজ মালিকরা

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন লাইটারেজ জাহাজ মালিকেরা। কয়লা পরিবহনে ভাড়া সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়া হয়েছে। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) গতকাল থেকে নতুন এই ভাড়ার হার কার্যকর করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে কয়লার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বছর কয়েক আগে পুরো বছরে ১০/২০ টন কয়লা আমদানি করা হলেও কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর এখন তা আড়াই কোটি টনে উন্নীত হচ্ছে। বর্তমানে বছরে প্রায় এক কোটি টন কয়লা আমদানি হচ্ছে বিদেশ থেকে। এরমধ্যে বেশিরভাগ কয়লা আসছে ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত থেকে। ভারতের কয়লা সড়কপথে আমদানি হয়। তবে বাংলাদেশের কয়লার অনেক বড় উৎস ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির পুরোটাই আনা হয় সাগরপথে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে গত বছর বাংলাদেশ ৭৫ লাখ টন কয়লা আমদানি করেছে। এরমধ্যে ৬৬ লাখ টনই এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাঁশখালী এসএস পাওয়ার এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে দেশের কয়লা আমদানির পরিমাণ এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ আড়াই কোটি টন কয়লা আমদানি করবে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিনই লাগবে ১০ হাজার টন কয়লা। মাসে তিন লাখ টন করে বছরে ৩৬ লাখ টন কয়লা ব্যবহৃত হবে মাতারবাড়িতে। বাঁশখালীর এসএস পাওয়ারেও প্রায় একই হারে কয়লা ব্যবহৃত হবে।

দেশে সাগরপথে আমদানিকৃত কয়লার প্রায় পুরোটাই পরিবাহিত হয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে এসব কয়লা মাদার ভ্যাসেল থেকে খালাস করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। অন্যান্য পণ্যের চেয়ে কয়লা পরিবহনে বেশি ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু কয়লা পরিবহনের এই খরচ গতকাল থেকে কমিয়ে দিয়েছেন লাইটারেজ জাহাজ মালিকেরা। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বিবেচনায় রেখে খরচ কমিয়ে আনার স্বার্থে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কয়লা পরিবহনের ভাড়া কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গতকাল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে জানানো হয়েছে।

গতকাল থেকে কার্যকর হওয়া ভাড়ায় সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া কমানো হয়েছে। গড়ে ভাড়া কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে প্রতি টন কয়লা পরিবহনের ভাড়া ছিল ৩৭৪ টাকা। গতকাল তা কমিয়ে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভাড়া কমেছে ৩৩.১৫ শতাংশ। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি টন কয়লা পরিবহনে ভাড়া ছিল ৯৮১ টাকা। গতকাল তা কমিয়ে ৬৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়া কমেছে ২৯.৬৬ শতাংশ। পায়রায় ভাড়া ছিল ১০৬১ টাকা। গতকাল থেকে তা কমিয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া কমেছে ৩৪.০২ শতাংশ। বরগুনার তালতলীতে প্রতি টন কয়লা পরিবহনের ভাড়া ছিল ১১১৮ টাকা। গতকাল থেকে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৭৫০টাকা। ভাড়া কমেছে ৩২.৯১ শতাংশ। বাঁশখালীতে প্রতি টন কয়লা পরিবহনে ভাড়া ছিল ৬১২ টাকা। তা কমিয়ে করা হয়েছে ৩৫০ টাকা। ভাড়া কমানো হয়েছে ৪২.৮১ শতাংশ। মাতারবাড়িতে প্রতি টন কয়লা পরিবহনের ভাড়া ছিল ৬৭৯ টাকা। গতকাল তা কমিয়ে করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। ভাড়া কমেছে ৩৩.৭৫ শতাংশ। উপরোক্ত ছয়টি রুটে গড়ে ৩৪.৩৮ শতাংশ ভাড়া কমানো হয়েছে।

গতকাল ডব্লিউটিসির কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি উদ্যোগের অংশীদার হতেই জাহাজ মালিকেরা ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। জ্বালানি তেলের দামসহ জাহাজ পরিচালনা ব্যয় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও জাহাজ মালিকেরা নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাহাজ মালিকদের অন্যতম নেতা শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশে কয়লা বিদ্যুতের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে কয়লা আমদানির পরিমাণ। সরকার দেশের শতভাগ মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সফলতার জন্যই আমরা জাহাজ মালিকেরা ভাড়া কমিয়ে দিয়েছি। জাহাজ মালিকদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে হামলায় দুই যুবলীগ নেতা আহত
পরবর্তী নিবন্ধ৮০ লাখ টাকার ৬১টি মহিষের নিলাম ৩০ লাখে