ভোর শুরু হতেই বয়ে যাচ্ছে কনকনে হিমেল হাওয়া। দিনের বেলায় শীতের অনূভুতি কম থাকলেও রাতে দিকে সেটি বাড়ছে। বিশেষ করে ভোররাতের দিকে কাঁথা–কম্বলের সাথে নগরবাসীর সখ্যতাও বাড়ছে। যদিও নগরীর তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি।
অন্যদিকে শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে লেপ–তোশক ও কম্বলের চাহিদা। শীতের মাঝে উষ্ণতার খোঁজে নগরবাসী ভিড় করছেন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। এছাড়া বিভিন্ন কমপোর্টারের চাহিদাও রয়েছে বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় কম্বল ও লেপ তোশকের দাম বেড়েছে। কম্বলের ফেব্রিক্সের আমদানি খরচ বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার কারণে এতে প্রভাব পড়েছে। গতকাল বিকেলে নগরীর লালদীঘি পুরাতন গির্জা এলাকার লেপ তোশকের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেপের আকার অনুযায়ী বর্তমানে মজুরি পড়ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসেবে লেপ ৪ হাত বাই ৫ হাত পড়ছে প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, সিঙ্গেল ৩ হাত বাই ৫ হাত লেপ পাওয়া যাবে ২ হাজার টাকায়। সিঙ্গেল তৈরি তোশক সোয়া দুই হাত বাই সাড়ে ৪ হাতের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া ৪ হাত বাই ৫ হাত তৈরি তোশকের দাম প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়।
লেপ তোশক বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, শীতের সময় লেপের চাহিদা বাড়ে। এখন দেশি–বিদেশি কম দামি বিভিন্ন কমপোর্টার ও কম্বলের কারণে লেপের ব্যবসা আগের চেয়ে কমে গেছে। শীতে তোশকের ব্যবসা খুব বেশি ভালো হয় না। কম্বলের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিঙ্গেল ও ডাবল কম্বলের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় মানভেদে ৩০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রিয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেটে বর্তমানে সিঙ্গেল কম্বল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ডাবল কম্বল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার ডিজাইনভেদে কম্বলের দাম আরো বেশি।
তামাকুমন্ডি লেইন এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, লেপ তৈরিতে খরচ বেড়েছে। সাধারণত আমরা রেডিমেড লেপ তোশক খুব বেশি করি না। প্রায় সব অর্ডার নিয়ে করি। তবে বর্তমানে শিমুল তুলার দাম বেড়ে যাওয়ায় লেপ তোশক তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। তাই অনেকে দেড় হাজার–দুই হাজার টাকায় কম্বল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিক্রি হচ্ছে লেপের বিকল্প কম্পোর্টার। কম্বলের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন কম্পোর্টার কেনার প্রতি ঝুঁকছেন। কম্পোর্টার বিক্রেতা মোহম্মদ আলী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কম্পোর্টার বিক্রি বেড়েছে। এটি ঠিক গত বছরের তুলনায় এ বছর কম্পোর্টারের দামও বেশি। তারপরেও কম্বলের তুলনায় দাম কম, তাই অনেকে কম্পোর্টার কিনছেন। বর্তমানে আকার ভেদে ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার ৫০০ টাকার কম্পোর্টারও পাওয়া যাচ্ছে।
জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, শীত কাপড়ের মৌসুমী ব্যবসা। এই ব্যবসায় আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তাই মুনাফাও কম। বাজারে এখন কম্পোর্টারের চাহিদা বেশি। কম্পোর্টার মূলত পলয়েস্টোর কাপড় ও তুলার সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়া কোরিয়া ও থাইওয়ান থেকে পুরনো ব্যবহৃত কম্বলের কাছেও বাজার হারাচ্ছে লেপ।