ভোরের আলো ফোটার আগেই নগরীর চর চাক্তাইয়ের ফিশারিঘাটে আসতে শুরু করেন মাছ ব্যবসায়ীরা। ভোর থেকে বিকিকিনি শুরু হয়ে চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। ফিশারিঘাটে সাধারণত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরা আসেন। এছাড়া চট্টগ্রামের আশপাশের জেলাগুলোতেও অর্ডার নিয়ে মাছ বিক্রি করেন আড়তদাররা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের সরবরাহ কমার কারণে বেচাবিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলছেন ফিশারিঘাটের মাছ ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন যেসব মাছ পাওয়া যায়, প্রায় সবই কোল্ড স্টোরেজের হিমায়িত মাছ।
ফিশারিঘাটের আড়তদাররা বলছেন, ফিশারিঘাট মূলত জমজমাট থাকে ইলিশের মৌসুমে। তবে অন্যান্য বছরগুলোতে ইলিশের মৌসুম ছাড়াও সাগরে কোরাল, লাক্কা, রূপচাঁদা ও লইট্টা মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে বলা যায়, সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে যারা সামুদ্রিক মাছের ব্যবসা করেন তারা খুব কষ্টে আছেন। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে চিংড়িসহ মিঠা পানির রুই, কাতলা, মৃগেলসহ অন্যান্য মাছ আসাও কমে গেছে। তাই মাছের দামও বাড়তি। এছাড়া পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে।
জানা গেছে, নগরীর ফিশারিঘাটে ১০৩টি গদি (আড়ত) আছে। যেখানে কর্মরত প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এবং পাঁচ হাজার কর্মচারী। করোনাকালীন অনেক ব্যবসায়ী লোকসান গুণেন। সেই সময় ক্ষতি পুষিয়ে অনেকে নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করেন। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আছেন বিপাকে।
ফিশারিঘাটের প্রবীণ আড়তদার আজিজুল হক সওদাগর বলেন, ফিশারিঘাটে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি মিঠা পানির মাছের সরবরাহও তলানিতে ঠেকেছে। চট্টগ্রামে মিঠা পানির মাছ বিশেষ করে রুই, কাতলা, মৃগেল ও চিংড়ির মতো মাছ আসে সাতক্ষীরা থেকে। তবে সম্প্রতি মাছের সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। যা আসছে দামও বেশি। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে মাছের দাম উর্ধ্বমুখী। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিছু পরিমাণ মাছ আসে, সেগুলো একদম নগন্য। জানতে চাইলে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাগরে মাছ কমে গেছে, কেন কমে গেছে সেটি বলা মুশকিল। আগে বোটে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসতো। এখন সেই দিন নেই বললেই চলে। শুধু সাগরের মাছ নয়, মিঠা পানির মাছের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। মাছ আহরণকারী ও ব্যবসায়ীরা প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অথচ ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো পৃষ্টপোষকতা পায় না বললেই চলে। করোনাকালীনও আমরা কোনো ধরনের প্রণোদনা পাইনি।