আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে এলএনজি আমদানি কমেছে। এতে করে দেশে গ্যাসের যোগানও কমে গেছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে চট্টগ্রামে যোগান কমানো হতে পারে। কিছুদিন আগেও মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলেও তা বর্তমানে ৮শ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
সূত্রে জানা যায়, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা ২৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের যোগান দিতে পারে; যা চাহিদার মাত্র ৬২ শতাংশ। আবার এই গ্যাসের একটি বড় অংশের যোগান দেওয়া হয় আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট গ্যাসের চাহিদার অন্তত ২৫ শতাংশ এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহ দেওয়া হয়। অপরদিকে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪শ মিলিয়ন ঘনফুট। এখানে সরবরাহ দেওয়া হয় দৈনিক ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। চট্টগ্রামের গ্যাস চাহিদার পুরোটাই দেওয়া হয় আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে। সিলেট বা কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস চট্টগ্রামে আনার সুযোগ না থাকায় আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হওয়ায় ক্রমে এলএনজি নির্ভরতা বাড়ছে। বিদেশ থেকে এলএনজি কিনে এনে তা মহেশখালীর দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ দেওয়া হয়।
বর্তমানে এলএনজির চড়া মূল্য আমদানি ব্যাহত করছে। খোলা বাজার থেকে গ্যাস কেনার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। প্রতি ইউনিট এলএনজি বছরখানেক আগে ১০ ডলারের নিচে ছিল। এখন তা ১৫ ডলার ছুঁই ছুঁই। একইসাথে এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মানও চোখে পড়ার মতো কমে গেছে। ফলে আগে যে পরিমাণ টাকা খরচ করে এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা যেত, এখন তা করতে অন্তত দেড় গুণ টাকা লাগছে।
গতকাল প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ছিল ১৩.৮০ ডলার। গেল সপ্তাহে তা ১৪.৯০ ডলারে ঠেকেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যা সর্বোচ্চ দর বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, সরকার ইতোমধ্যে এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শেষ করেছে; যেখানে প্রতি ইউনিটের দাম পড়েছে ১৬ ডলারের বেশি।
মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের ন্যাশনাল গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়। এর একটি টার্মিনাল পরিচালনা করে আমেরিকান কোম্পানি এঙিলারেট এনার্জি, অন্যটি দেশীয় কোম্পানি সামিট। দুটি টার্মিনাল থেকে কিছুদিন আগেও ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস দেওয়া হলেও গত কয়েকদিন ধরে সরবরাহ ৮শ মিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এলএনজির যোগান কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে গ্যাসের সবরাহ কমিয়ে আনা হতে পারে। বিশেষ করে কাফকো এবং সিইউএফএল পুরোদমে চালু রাখতে হলে চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা অন্যান্য খাতে গ্যাসের যোগান কমে যাবে। কাফকো এবং সিইউএফএল পুরোদমে চালু রাখতে হলে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগে। বর্তমানে কাফকো পুরোদমে চলছে। সিইউএফএলও উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে। কারখানাটি সার উৎপাদনের জন্য কারখানা চালু করেছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানটিতে সার উৎপাদন চলবে। এর বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবলমাত্র শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান কমানো হলে শিকলবাহাকে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার শিকলবাহা চালু রাখতে হলে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক খাতে সংকট তৈরি হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিক কমে গেছে। প্রতিটি স্টেশনে দীর্ঘ গাড়ির লাইন লেগে থাকে। গ্যাসের যোগান কমে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিইউএফএল পুরোদমে উৎপাদন শুরু করলে এই পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে এবং গ্যাসের চাপ কমে গেলে বাসাবাড়িতে রান্নার চুলা অনেক এলাকায় বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানান, আসলে আমরা পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর। এলএনজি আমদানি না বাড়লে চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টরে স্বাভাবিক প্রবাহ আসবে না। তিনি স্বীকার করেন, ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সরবরাহ কমিয়ে চট্টগ্রামে যোগান কিছুটা বাড়ানো গেলে এখানে পরিস্থিতি সহনীয় থাকত। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে সিলেট, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস ন্যাশনাল গ্রিডের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশে সরবরাহ হয়।