চট্টগ্রাম নগরের পুলিশি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং গতিশীল করার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সিটিজেনস ফোরাম নামে একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। আগে এটি ছিল কমিউনিটি পুলিশিং। গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় দামপাড়ায় পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নগরীর সিটিজেনস ফোরামের নবগঠিত কমিটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।
তিনি বলেন, সিটিজেনস ফোরাম কমিউনিটি পুলিশের নতুন রূপ। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা থেকে এর ব্যাপ্তি আরও বেশি। যা কাজ করবে পুলিশ ও নগরবাসীর মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে। তিনি বলেন, সিটিজেনস ফোরামের সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কীভাবে পুলিশি সেবার উন্নতি করা যায়, কোথায় কোথায় উন্নতি করা যায়, কী কী সেবা দেওয়া যায়, কোন কোন নতুন সেবা দেওয়া যায় তা ঠিক করবেন। সমাজে যাদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই এই ফোরামের সদস্যরা তাদের পাশে দাঁড়াবেন। হাসিব আজিজ বলেন, এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এই ফোরামে দল–মত নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণি–পেশা, ধর্ম–বর্ণের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। প্রত্যেকটি থানাতেই এই ফোরামের সদস্যদের বসার এবং মিটিং করার ব্যবস্থা থাকবে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে মিলেমিশে তারা এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি এবং চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে কি কি করা যায় সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিবেন। তিনি জানান, সমাজের প্রান্তিক অংশ যেমন প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষ, দুস্থ নারী, যারা গরিব মানুষ কোথাও সেবা দাবি করতে পারে না এই ফোরামের সদস্যরা তাদের কথাগুলো থানা পুলিশকে অবহিত করবেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, নগরের ১৬ থানার প্রতিটিতেই এই কমিটি কাজ করবে। এসব কমিটির সদস্যদের সাথে সমন্বয় করতে মহানগরীর অধীনে থাকবে একটি কমিটি। আর পুরো নগরে জনসচেতনতা বাড়াতে ও অপরাধ কমাতে এই কমিটির মোট ৭৭৪ জন সদস্য কাজ করবে।
পুলিশ বলছে, নগরের ১৬ থানার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম, এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠক, সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের নিয়ে সিটিজেনস ফোরাম গঠন করা হয়েছে। গত সরকারের আমলে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মতো বিতর্ক এড়াতে এবার কয়েক ধাপে ভেরিফিকেশন করে সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান সিএমপি কমিশনার।
জানা গেছে, সমাজের সব স্তরের জনমানুষকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করবে এই ফোরাম। এর মধ্যে সর্বস্তরের মানুষ পুলিশের কাজে সহযোগিতা, অপরাধবিরোধী সচেতনতা তৈরি, বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, মাদকের কুফল, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধসহ সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে কাজ করবেন তারা।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগরের ৮৬ সদস্য, কোতোয়ালী থানার ৪৫, সদরঘাট থানার ৫০, চকবাজার থানার ৫০, বাকলিয়া থানার ৪১, খুলশী থানার ৫৩, বায়েজিদ থানার ৫১, পাঁচলাইশ থানার ৪২, চান্দগাঁও থানার ৩৫, পাহাড়তলী থানার ৩৬, আকবরশাহ থানার ৪৫, হালিশহর থানার ৫৮, ডবলমুরিং থানার ৪৯, বন্দর থানার ৩৭, ইপিজেড থানার ৩৬, পতেঙ্গা থানার ২৯ ও কর্ণফুলী থানার ৩১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর মহানগরীর ১৬টি থানা কমিটি ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে সবাই পরিচিত হন। কমিটির নেতৃবৃন্দ এ সময় তাদের বক্তব্যে এই নতুন উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন ও তাদের কর্মপন্থা তুলে ধরেন। গঠিত কমিটিসমূহের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. রইছ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. হুমায়ুন কবির, উপ–পুলিশ কমিশনার (সদর) এস এম মোস্তাইন হোসেন, সিটিজেনস ফোরাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মশিউল আলম স্বপন, সদস্য সচিব ডা. আবু নাছের প্রমুখ।