কবীর চৌধুরী (১৯২৩–২০১১)। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, শিক্ষক, সংগঠক, অনুবাদক। তিনি প্রগতিশীল উদারচিন্তার এক শুদ্ধচারী ব্যক্তিত্ব এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ। কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ই ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার গোপাইরবাগ গ্রামের মুন্সী বাড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিলো পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর কর্মক্ষেত্র। কবীর চৌধুরীর ডাক নাম মানিক। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু বাড়িতে। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন পিরোজপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্সে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদকসহ এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৫৭–১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ফুলব্রাইট বৃত্তিধারী হিসেবে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন সাহিত্য সম্পর্কে এবং ১৯৬৩–১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছুটিজনিত শূন্যপদে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীসময়ে দীর্ঘ দশ বছর কবীর চৌধুরী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারের বেসামরিক সরবরাহ বিভাগে জেলা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা কলেজের অধ্যাপক, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ, জনশিক্ষা দপ্তরের সহকারী পরিচালক, জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সিনিয়র ইনস্ট্রাকটর, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ এবং বাংলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কবীর চৌধুরী ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় অধ্যাপক পদ লাভ করেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদীর্ঘ যাত্রাপথ কবীর চৌধুরী বিচরণ করেছেন মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেক, মানবমুখী কর্মপ্রেরণা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে। শ্রেণির ঊর্ধ্বে সর্ব মানবের মর্যাদায় আস্থাবান এই শিল্পীসত্তা সমাজকে অবক্ষয়ী মূল্যবোধের নিগঢ় থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে ছিলেন সদা সচেষ্ট। সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অনুবাদ, নাটক, চিত্রকলা, রাজনীতি প্রভৃতি বিচিত্রমুখী বিষয় নিয়ে কবীর চৌধুরী প্রচুর লিখেছেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর কবীর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।