অরুণ দাশগুপ্ত (১৯৩৬–২০২১)। এক বহুমুখী প্রতিভার নাম। ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে তাঁর জন্ম। কবিতা, চিত্রকলা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, সঙ্গীতসহ নানাক্ষেত্রে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। চট্টগ্রামে তথা বাংলাদেশে অনেক লেখক গড়ে তুলেছে আজাদী। তার পেছনের কারিগর ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। তিনি নির্লোভ ও নিরহংকারী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোয় অনেক ব্যক্তিকে আলোকিত করেছেন। অরুণ দাশগুপ্তের প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথের ছয় ঋতুর গান ও অন্যান্য’ এবং ‘নবীনচন্দ্র সেন’। প্রচুর কবিতা লেখা হলেও তাঁর কোনো কবিতার বই প্রকাশ হয়নি। সাহিত্যসমালোচকরা তাঁর কবিতার মূল্যায়ন করেছেন এভাবে : ‘অরুণ দাশগুপ্ত কবি। কবিদের কারিগর। ‘তিনি মূলত কবি। অন্তর্লোক অবলোকন করেন কবিতায়। তার ভাষীরীতি ও আঙ্গিক ধ্রুপদ মার্গেও কথা স্মরণ করিয়ে দেয় প্রতিমুহূর্তে। শব্দ ও বোধ যোজনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্নস্বরের কাব্যকলা নির্মাণে সচেষ্ট রয়েছেন তিনি। তৃতীয় বোধনের স্ফুরিত কবিতায় তিনি মানবিক আকুলতা আর যাপিত জীবনের স্বপ্নকথা বলেন রূপকথার আঙ্গিকে। ঋদ্ধ জীবনবোধ কবিতাকে আপাত দুর্বোধ্যতায় আকীর্ণ করছে বলে মনে হলেও স্বীকার্য সত্য এই যে, তাঁর কবিতা নিবেশ অভিনিবেশ দাবী করে এবং বোধের অন্য জগতে দূরগামী অভিযাত্রী করে অনুরাগীকে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় তার কোনো কবিতার বই নেই।’ লেখক হিসেবে তিনি যতটা খ্যাতিমান, এ জনপদে লেখক সৃষ্টিতেও তিনি ছিলেন ততটা উদার। লেখকদের প্রাণিত করতে এবং লেখায় নিবেদিত কর্মীদের উৎসাহিত করতে তিনি অতুলনীয়। চট্টগ্রামে একটি ‘সাহিত্যমানসম্পন্ন সমাজ’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। ২০২১ সালের ১০ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি নিজ গ্রামে পরলোকগমণ করেন। আজ তাঁর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।