মাত্র ১০ দিন পর ২৪তম জন্মদিন। হয়তো আরও একটি চমৎকার কবিতা বেরিয়ে আসত ইরানের তরুণ কবি পারনিয়া আব্বাসির কলম থেকে। কিন্তু গত গত শুক্রবার ভোররাতে তেহরানে ইসরায়েলের হামলায় পারনিয়ার পরিবারের সব সদস্য নিহত হন। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তিনি সাহিত্য জগতে নিজের উজ্জ্বল উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন। তিনি পেশায় ছিলেন ইংরেজি শিক্ষিকা। পারনিয়া সমসাময়িক ইরানি কবিদের মধ্যে এক উজ্জ্বল কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
তার গভীর ও আবেগঘন কবিতাগুলো ইরানের সাহিত্য মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তার আলোচিত কবিতার শিরোনাম ‘নিভে যাওয়া নক্ষত্র’। ভজন–ই–দুনিয়া সাহিত্য পত্রিকার জেনারেশন জেড–এর কবিদের নিয়ে প্রকাশিত একটি বিশেষ সংখ্যায় এটি স্থান পেয়েছিল। পত্রিকাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পারনিয়া তার লেখার প্রেরণা সম্পর্কে বলেছিলেন, আমার সঙ্গে যা কিছু ঘটে, আমি চেষ্টা করি সেগুলোকে লেখায় ধরতে–সেই মুহূর্তের অনুভূতিকে কবিতায় রূপ দিতে। পারনিয়ার ‘নিভে যাওয়া নক্ষত্র’ কবিতাটি যেন তার নিজের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এই কবিতার কয়েকটি লাইন বর্তমানে ফেসবুকে শত শত মানুষের পোস্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে: ‘তুমি আর আমি/ একদিন শেষ হয়ে যাব/ কোথাও, কোনোখানে/ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কবিতা/ চুপ হয়ে যাবে।’
মাত্র ২৩ বছর বয়সে সত্যি সত্যি নীরব তারা হয়ে গেছেন ইরানের উদীয়মান এই কবি। ক্ষেপণাস্ত্রের একটি আঘাতে, আগুনের একঝলকে এ সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
ধসে পড়া ভবনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গোলাপি রঙের ম্যাট্রেস, সেটির এক প্রান্ত রক্তে ভেসে যাচ্ছে, রক্তের ওপর কয়েক গোছা চুল, যেন কংক্রিটের চাদর মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে কেউ। ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সবার প্রথমে পারনিয়ার মৃতদেহ বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপর আনা হয় তাঁর ভাই পারহামের মৃতদেহ, ১৬ বছরের এ কিশোরের জীবন সবে শুরু হয়েছিল। পারনিয়ার বাবা অবসরে যাওয়া শিক্ষাকর্মী আর মা মেল্লি ব্যাংকের সাবেক কর্মীর মৃতদেহ তখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কয়েক ঘণ্টা পর ভারী যন্ত্রপাতি এনে কংক্রিটের স্তূপ সরিয়ে তাঁদের মৃতদেহ বের করা হয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বিমান হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুলহামিদ মিনুশেহর, যিনি একই ভবনে পারনিয়াদের সঙ্গে বসবাস করতেন। পারনিয়ার বন্ধু ও সহকর্মীরা তাকে ‘জীবন ও কবিতায় পরিপূর্ণ’ একজন মানুষ হিসেবে স্মরণ করছেন। তার অকাল প্রয়াণ ইরানের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।