কবি কায়কোবাদ : মুসলিম জাতীয় চেতনার কণ্ঠস্বর

| সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

কবি কায়কোবাদ (১৮৫৭১৯৫১)। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মুসলিম কবিদের মধ্যে যাঁরা প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কবি কায়কোবাদ। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসলিম সমাজ যখন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছিল, তখন কায়কোবাদ তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এক নবজাগরণ ঘটান। তাঁর কাব্যে ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা, বীরত্ব এবং নৈতিকতা এক অপূর্ব মিশ্রণে উঠে এসেছে।

কায়কোবাদএর প্রকৃত নাম ছিল মোহাম্মদ কাজেম আল কোরায়শী। তিনি ১৮৫৭ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশব থেকেই সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন এবং অল্প বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। কায়কোবাদের সাহিত্যজীবনের সূচনা ঘটে উনিশ শতকের আশির দশকে। তিনি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে কাব্য রচনা করতেন। তার কবিতায় মুসলমানদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার তীব্র আহ্‌বান ছিল। কায়কোবাদএর সর্বাধিক খ্যাতিপ্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ ‘মহাশ্মশান’, ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। এটি একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক মহাকাব্য, যেখানে ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ এবং সুলতান মুহম্মদ ঘোরী ও পৃথ্বীরাজ চৌহান এর দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে। এই কাব্যে মুসলিম বীরত্ব, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের গৌরবময় ইতিহাস চিত্রিত হয়েছে অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে। ‘মহাশ্মশান’ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে: কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৫), মহাশ্মশান (১৯০৪), শিবমন্দির (১৯২২), অমিয়ধারা (১৯২৩), শ্মশানভস্ম (১৯২৪) ও মহরম শরীফ (১৯৩২)। তাঁর লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের মিশ্রণ ঘটলেও তা পাঠকের বোঝার অসুবিধা না ঘটিয়ে বরং ভাবের গভীরতা বাড়িয়েছে। কায়কোবাদ শুধুই একজন কবি ছিলেন না, তিনি একজন ঐতিহাসিক চেতনার ধারক ও বাহক। তাঁর কাব্যে মুসলিম জাতির গৌরবময় অতীত যেমন উঠে এসেছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও রেখে গেছেন অনুপ্রেরণার বার্তা। বাংলা মুসলিম সাহিত্যধারার অগ্রদূত হিসেবে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বাংলা কাব্যসাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাঁকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ (১৯২৫) উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ১৯৫১ সালের ২১ শে জুলাই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধলালখান বাজার মোড়ে রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ চাই