কবি কাজী নজরুল ইসলাম

নিগার সুলতানা | সোমবার , ২৯ মে, ২০২৩ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু কবি ছিলেন না। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সৈনিক এবং ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদী কণ্ঠএবং কলম যোদ্ধা। চরম দুঃখদুর্দশা, অভাবঅনটন, লাঞ্চনাবঞ্চনার মধ্য দিয়ে শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে তাঁর। শত দুঃখদুর্দশায় থেকেও তিনি কখনো কাব্য ও সাহিত্য চর্চা থেকে পিছ পা হননি। কাজী নজরুল ইসলাম শৈশব থেকে ইসলামি দীক্ষায় বড় হয়ে উঠেন এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি আনুগত্য ছিলেন। তাঁর লেখা অনেক গানে এ পরিচয় বহন করে। যেমন: ‘তাওহিদেরই মুর্শিদ আমার, মোহাম্মদের নাম’, ‘ত্রিভুবনে প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়’ ইত্যাদি। এই সব হামদ ও নাত মুসলিমদের হৃদয়ে বিশালভাবে সাড়া জাগিয়েছে। তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে একটি গান লিখেছিলেন, ‘মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। কতটুকু ধর্মপরায়ণ হলে এমন একটি গান লিখতে পারেন। ঈদের চাঁদ উঠলেই মুসলিম এর ঘরে ঘরে তাঁর লেখা গান বাজতে থাকে: ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এই গানের ছন্দে ছন্দে ছোট বড় সবার হৃদয়ে ঈদের আনন্দের ঝংকার তুলে। এই গান কখনো পুরোনো হয় না। প্রতি বছরই মনে হয় এই গান ঈদের আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। যেমন তিনি ধর্মপরায়ণ ছিলেন তেমনি তিনি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্য জীবনে যে অসামান্য কাজগুলি করেছেন সেগুলির মধ্যে হিন্দু মুসলমানের সমন্বয় ঘটানো ছিল অন্যতম।

ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্বিষহ অবস্থায় নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’ গ্রন্থের কবিতা সমূহ মানসপটে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রাজ্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিলেন। কারাবন্দী অবস্থায়ও তাঁর প্রতিবাদী অস্ত্র থেমে থাকেনি। তিনি শুধু ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি, তিনি পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমতা নিয়েও প্রতিবাদী এবং বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি চার হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। সঙ্গীতের জগতে কাজী নজরুল ইসলামকে ‘বুলবুল’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯২১ সালে ২২ বছর বয়সে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে আখ্যায়িত হন। কাজী নজরুল ইসলাম শ্রমিকদের এবং আপামর দুখী মানুষদের ন্যায্য দাবী আদায়ে প্রতিবাদী ছিলেন। শ্রমিকদের প্রতিবাদী আন্দোলনে জাগ্রত করে তোলেন।

বিংশ শতাব্দীর বাঙালির চিন্তা চেতনায়, রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে, শিক্ষা জগতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে মর্যাদা দিয়ে কবির ত্যাগ ও তিতিক্ষার এবং প্রতিভার যাথার্থ মূল্যায়ন করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় : শিক্ষাবিদ ও ভাষাতাত্ত্বিক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে