কবি ও বাচিক শিল্পী আসাদ চৌধুরী একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সাহিত্যিক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি আসাদ চৌধুরীর দায়বদ্ধতা ছিল প্রশংসা করার মত। একজন অতুলনীয় মানবিক মানুষ ছিলেন তিনি। তার সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে এটা বুঝতে পেরেছি আমাদের দেশের ইতিহাস নিয়ে তার গভীর জ্ঞান ছিল। একজন নির্মোহ ও নিরপেক্ষ কথকের মত বলে যেতেন আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তার কণ্ঠস্বরও ছিল ভরাট ও সুন্দর।
আসাদ চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আবৃত্তি শিল্পের শিক্ষক ক্বণন সভাপতি মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক ও চিন্তক চৌধুরী গোলাম রব্বানী এবং কবি, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার অভীক ওসমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক, ক্বণন কার্যকরী পরিষদ সদস্য কবি ও আবৃত্তি শিল্পী রুম্মান মাহমুদ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্বণন কার্যকরী পরিষদ সদস্য লেখক ও আবৃত্তি শিল্পী সৌভিক চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্বণন সদস্য আবৃত্তি শিল্পী শুভ্রা চক্রবর্তী।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, কবি আসাদ চৌধুরীর মত একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সাহিত্যিককে ক্বণন মনে রেখেছে, এত বড় মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করে স্মরণ করছে– এর জন্য আমি ক্বণনের প্রতিটি সদস্যকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দেশে গুণীকে কবর দেয়ার সাথে সাথে তার মহৎ কীর্তিকেও কবর দেয়া হয়। ক্বণন তা করেনি। এই অনুষ্ঠান করে তারা চট্টগ্রামবাসীকে সম্মানিত করেছে। গুণীর কদর যারা করে তারাও সম্মানিত হয়।
তিনি বলেন, ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য গুণীজনরা কে কোথায় থাকতেন তা ছিল তার নখদর্পণে। অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তাদের খোঁজখবর জানতে চাইতেন। এটাই ছিল কবি আসাদ চৌধুরীর মানবিক সৌন্দর্য। লেখক আসাদ চৌধুরীর মানুষ হিসাবে এই বড়ত্ব অনুসরণযোগ্য। তিনি স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে ভালবাসতেন। তার এই দিকটা আমার খুব ভাল লাগতো। কারণ স্বপ্ন মানুষকে সাফল্যের অনেক চূড়ায় নিয়ে যায়।
চৌধুরী গোলাম রব্বানী বলেন, কবি ও বাচিক শিল্পী আসাদ চৌধুরীর হৃদয়ের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করতো। সমুদ্রের মত হৃদয়ের বিশালতা ও ঔদার্য দিয়ে তিনি সবাইকে আপন করে নিতেন। কবি ও মানুষ তার এই দ্বৈত চরিত্রের মধ্যে কোনো প্রকার ভনিতা ও কৃত্রিমতা ছিল না। উর্দু ও ফিলিস্তিনী কবিতা বাংলা ভাষায় পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে আসাদ চৌধুরী ছিলেন পথিকৃৎ। আমার মত মফস্বলের একজন অচেনা মানুষ তার অনেকবার সান্নিধ্যধন্য হয়েছি– এটা ভাবতে খুব ভাল লাগছে, আবার কষ্টও হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে, মন ভরে তার কদর করতে পারিনি।
অভীক ওসমান বলেন, আসাদ চৌধুরী একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার প্রথম কবিতা প্যাট্রিস লুমুম্বাকে নিয়ে। এর পরবর্তীতে বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ইলা মিত্র এবং ভাষা আন্দেলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার গদ্য ও কবিতা প্রমাণ করে যে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন একমাত্র কবি। তিনি বাংলা ভাষাকে বাইরেও বিস্তৃত করেছেন যা অনুন্মোচিত রয়ে গেছে।
রুম্মান মাহমুদ বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছে কবি ও বাচিক শিল্পী আসাদ চৌধুরীর সান্নিধ্য পাবার। যাপিত জীবনের পরতে পরতে কবি আসাদ চৌধুরী ছিলেন কর্মঠ, প্রাণচঞ্চল এবং হাস্যোজ্জ্বল। আসাদ চৌধুরী ছিলেন সবার কবি। কোন গন্ডিতে তিনি বাঁধা ছিলেন না। দলমত নির্বশেষে তিনি সবার কাছে আপন। বিভেদের যে সর্বনাশা চিন্তার নৈরাজ্য দিনে দিনে আমাদের দেশে চিন্তার সার্বজনীনতাকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে, তার আঁচড় কবি আসাদ চৌধুরীর গায়ে লাগেনি। তিনি চিন্তা চেতনায় মুক্ত স্বাধীন ও স্বাধীনতাকামী মানুষ ছিলেন।
আলোচনা সভার পর ক্বণন সভাপতি মোসতাক খন্দকারের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ক্বণন’র শিশু সদস্যদের পরিবেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ পরিবেশিত হয়। এছাড়া একক আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি শিল্পী রুম্মান মাহমুদ, সৌভিক চৌধুরী, তৃষা সেন, শরীফ মাহমুদ, প্রেমা চৌধুরী, শুভ্রা চক্রবর্তী, ইব্রাহীম মাহমুদ, মুনয়িম আসরা, হামিদ, রাইয়ান, মেহজাবিন, সমৃদ্ধ, নাবিলা, সামিহা, মারুফ, মুবাশ্শিরা, নওশিন, আসলিরাফ, জারিফ, রেঁনেসা, ফাবিহা, মুশফিকা, আফরিন, রুজাইনা ও অর্দ্রি।