কবি আসাদ চৌধুরীর ইন্তেকাল

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতার সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী (৮০)। কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি আসাদ চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহেরাজেউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩ মিনিট) কানাডার অশোয়া শহরের লেক রিজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আসাদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। তার পরিবার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কবি আসাদ চৌধুরী ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। গত মাসে এনজিওগ্রাম করে তার হৃদযন্ত্রের দুটি ব্লক সারানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে অশোয়া শহরের লেক রিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কবি।

কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোক বার্তায় তারা কবি আসাদ চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেনআওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ। পৃথক শোকবার্তায় তারা প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য, কবি আসাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী, মা সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম। উলানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আসাদ চৌধুরী। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬০ সালে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে নেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে আসাদ চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু। ঢাকায় এসে যুক্ত হন সাংবদিকতায়। ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন। পরে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। পরে বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেই অবসর নেন।

কবি হিসেবে সমাধিক পরিচিত হলেও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই আসাদ চৌধুরীর ছিল স্বচ্ছন্দ্য পদচারণা। শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন, লিখেছেন ছড়া, জীবনী। বেশকিছু অনুবাদ ও সম্পাদনতেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে তাঁর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। যা মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থ হিসেবে সব মহলে সমাদর পায়। তাঁর সম্পাদিত বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও প্রশংসিত ছিলেন। টেলিভিশনে সাহিত্যসংস্কৃতি বিষয়ে একাধিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন সফলভাবে। আসাদ চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে তবক দেওয়া পান (১৯৭৫), বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬), প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬), জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২), যে পারে পারুক (১৯৮৩), মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪), মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫), দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭), নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২), বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮), বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮), ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)। আসাদ চৌধুরী ১৯৭৫ সালে পেয়েছিলেন আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে পান বাংলা একাডেমী পুরস্কার। এ ছাড়া শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক, বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বনী কুমার পদক, জীবনানন্দ দাশ পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড. ইউনূসকে হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয় : দুদক সচিব
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁও থানা থেকে দুই এএসআই প্রত্যাহার