কবিতা, কাব্যপ্রেম ও কবিতার বই

একুশে বইমেলা

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

কবিতা; যেখানে মানুষের মনের আবেগ ও অনুভূতির কাব্যিক প্রকাশ ঘটে। তাই কবিতার প্রতি আকর্ষণ আছে সবার। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ও এক ধরনের কবিতা। সাড়ে ১৩শ বছর পূর্বে লেখা হয় এসব পদ বা কবিতা। সেই যে কবিতার যাত্রা, আর থামেনি। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ পেরিয়ে আমরা আছি আধুনিক যুগে। এখন লিখছেন সমকালের কবিরা। কবিতা লেখাও সহজ নয়। কবি এলিয়টের ভাষায়, ‘কবিতা হলো রক্তকে কালিতে রূপান্তর করার যন্ত্রণা’। সেই যন্ত্রণা উপেক্ষা করেই লিখেন কবি। কারণ ‘কবিতা হলো সৌন্দর্যের ছন্দময় সৃষ্টি’। অর্থাৎ কবিরা সৌন্দর্যের চর্চা করেন। কবিতার সৌন্দর্য পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অনন্য মাধ্যম হয়ে ওঠে বইমেলা।

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা বের করেছে অসংখ্য কবিতার বই। এখান থেকে কাব্যপ্রেমী পাঠকরা কিনছেন তাদের পছন্দের কাব্যগ্রন্থ। এবার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ময়ুখ চৌধুরীর ‘নীরবতা ছিল, আজও থাক’, মহীবুল আজিজের ‘মঁতাজ ও অন্যান্য সনেট’, হোসাইন কবিরের ‘অগ্নিজলে সুগন্ধশরীর’, ওমর কায়সারের ‘ক্ষুধা ও কফিলা’, হাসান হাফিজের ‘এখন যৌবন যার’ ও ‘জয়গাথা জুলাই বিপ্লব’, সুজন আরিফের ‘বিপরীত চাঁদের মুখ’, শুক্লা ইফতেখারের ‘একান্নবর্তী আকাঙ্ক্ষা’, শাহিদ হাসানের ‘সব ভুল শাহিদের’, ফাহমিনা নূরের ‘প্রাচীন অনুরাগ’, সাবিনা পারভীন লীনার ‘মুহূর্তের অমৃত নাদ’, সিমলা চৌধুরীর ‘কাঠগোলাপের মায়া’, প্রতিমা দাশের ‘চলো স্বপ্ন বুনি’, মুকুল চৌধুরীর ‘জল দিয়ে জল ছুঁই’, পারভীন আহম্মেদের ‘রাজবাড়ির ঝরাপাতা’, শিরীণ বেবীর ‘কাজল কালো জলের নদী’, রিদোয়ান হৃদয়ের ‘দূর যাত্রার পথিক’, আয়েশা সিদ্দিকী হ্যাপির ‘আমার নিস্তদ্ধ নীরবতা’, সৈয়দা সামিরা আহমেদের ‘মন সমীকরণ’, পরী ফিরোজার ‘বাঁশি বাজে হৃদয় মাঝে’ ও ‘আমি মুক্ত বিহঙ্গ’, চন্দনা ভট্টাচার্যের ‘জলের গিঁট’, স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তীর ‘যে দুপুর বাহানা বানায়’, আবদুল্লাহ আল মামুনের (কাইকর) ‘জীবন হাওয়ায় ভাসে’, মাহী ফ্লোরার ‘নির্বাচিত ওহী’ এবং কাজী জাহাঙ্গীরের ‘ছুঁয়ে দাও অনামিকায় বসন্ত বাথান’।

বিশ্বসাহিত্যের এবং বাংলা সাহিত্যের এক ধ্রুপদী আঙ্গিক সনেটে লেখা ৭২টি কবিতা আছে মহীবুল আজিজের ‘মঁতাজ ও অন্যান্য সনেট’এ। কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রথমত এসেছে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সমকাল। ২০২৪এর জুলাইআগস্ট মূর্ত হয়ে আছে কবিতাগুলোর মধ্যে। এছাড়া চিরায়ত যে বিষয় প্রেম, প্রকৃতি, সম্পর্ক, সামাজিক বৈচিত্র্য; সেসবও রয়েছে অনেকগুলো কবিতায়। শাহিদ হাসানের ‘সব ভুল শাহিদের’ কাব্যগ্রন্থে চার পঙ্‌ক্তি বিশিষ্ট প্রতিটি কবিতা আবেগ, প্রজ্ঞা, ইঙ্গিত, অভিমান, ক্ষোভ, প্রেম, বিরহ, হতাশা, দার্শনিকতা ও গাম্ভীর্যবোধ কালের পরিশীলিত চেতনায় উদ্ভাসিত।

এদিকে প্রকাশকদের সাথে আলাপকালে কেউ বলেছেন, কবিতার বই ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, কবিতার বই কম চলে। এর কারণ হিসেবে যোগ করেন, কবিতা সবাই বুঝেন না।

চন্দ্রবিন্দুর জুঁই বলেন, কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ময়ুখ স্যারের বই বেশি চলে। এছাড়া ‘মুহূর্তের অমৃত নাদ’ ও ‘প্রাচীন অনুরাগ’ বেশি চলছে এবারের মেলায়।

জলধি প্রকাশনার বিক্রয়কর্মী প্রণয় চাকমা বলেন, কবিতার বই ভালোই চলছে।

আবীর প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মুহম্মদ নুরুল আবসার বলেন, এবার বেচাকেনা কম হচ্ছে। সেখানে কবিতার বিষয়ে আলাদা করে বলা কঠিন। সামগ্রিক বিক্রি গতবারের তুলনায় সন্তোষজনক না। ষাটের দশকের গ্রামীণ জীবনযাত্রার পঠভূমি নিয়ে হরি নারায়ণ দাশের লেখা ‘পল্লী জীবনের স্মৃতি কাহন’ বেশি চলছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরিহ্যাব ফেয়ারে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট বিক্রি ও বুকিং
পরবর্তী নিবন্ধদুই দেশের চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা