কবিগুরুর প্রকৃতিবন্দনা

প্রতিমা দাশ | শুক্রবার , ৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

রবিঠাকুর। বাঙালি হয়েও কবিকে যারা বোঝার চেষ্টা করেননি জানার চেষ্টা করেননি, কবির গানে, কবিতায় মুগ্ধ হননি তাদের মতো দুর্ভাগা জাতি পৃথিবীতে নেইরবি ঠাকুর মানেই প্রকৃতি প্রেম পূজা ভালোবাসা বন্ধনসাহিত্যের কোনও কিছুই তিনি বাদ রাখেননি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রকৃতি তাঁর কলমে ঈশ্বর হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সাথে কবির আধ্যাত্মিক বন্ধন চিরকালের, তাই রবিঠাকুরের কবিত্বের সাথে প্রকৃতি কোথাও যেন নিজেই কবিতা লেখা শুরু করেছে।

‘ভোরের বেলা কখন এসে পরশ করে গেছে হেসে জেগে দেখি আমার আঁখির জল গেছে ভেসে’.. ভোরের শিশির বিন্দুতে তিনি ঈশ্বরের রূপ দেখেছেন। প্রকৃতির রং রূপ রসকে প্রার্থনায় আমাদের মানসপটে অনুভূতিকে ছুঁয়ে দিয়েছেন। বাঙালি ঋতু বৈচিত্র্যকে তিনি ধ্যানের সাথে লিখে গেছেন অগ্নিস্নানে সুচি হোক ধরা, এভাবে আমরা তাঁর মাধ্যমে বৈশাখকে নিমন্ত্রণ করি। বৈশাখে রুদ্র তাপে যখন আমরা অস্থির হয়ে যাই তখন আবার রবি ঠাকুরের আশ্রয়ে গিয়ে প্রার্থনাই রই, আর বৃষ্টির আকুলতায় বলি ‘এসো নীপবনে ছায়াবন বীথিতলে’মাটির সোঁদা গন্ধ, স্নান শেষে প্রকৃতির নতুন রূপ, চারিদিকে বৃষ্টির পতনে আশ্চর্য সংগীতধ্বনিত হয়। তখন কেউ হয়তো নীরবে গেয়ে যাচ্ছে– ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে’। বৃষ্টির পর নেমে আসে শান্ত বাতাস, প্রকৃতি তখন চুপচাপ হয়ে চারিদিকে মিষ্টি মৃদু হাওয়া দিতে থাকে! কবির কাছে তাও কবিতা হয়ে ফিরে আসে : ‘অমল ধবল ও পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া/ দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া।’ প্রকৃতির সবচেয়ে আশ্চর্য বৃষ্টিকে বেশি উপভোগ করতেন কবি। বর্ষা নিয়ে সর্বাধিক গান কবিতা লিখেছেন তিনি। ‘ আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে’। রবি ঠাকুরের বৃষ্টি এভাবেই আমাদের মনকে দোলায়িত করে, আমরা ঋদ্ধ হই কবির প্রকৃতি প্রেমে। প্রকৃতির সাথে প্রেমের আধ্যাত্মিক মিলন ঘটে কবির বর্ষামঙ্গল বাসনায় : ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে…’। তারপর শরতের শুভ্রতা মিশেছে হেমন্তের ফসলের ঢেউয়ের বুকে, ধানের ডগায় ভোরের শিশির দেখে কবি লিখেছেন : ‘হিমের রাতের ওই গগনের দিকগুলো রে, হেমন্তিকা করলো গোপন আঁচল ঘিরে’। বর্ষা যদিও রবি ঠাকুরের ভীষণ প্রিয় ঋতু কিন্তু তিনি শীতের প্রভাব ও সাহিত্য থেকে মুক্ত করেননি। জীবনের বিচিত্র পরিক্রমায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে ঋতুরা কবিগুরুর কলমে খেলা করেছে, যেমনটি লিখেছেন, ‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে’। ঋতুরাজ বসন্তের সাথে রবি ঠাকুরের সম্পর্ক যেন অশোক পলাশের মতই রঙিন, তাইতো তিনি বসন্তকে উৎসবের রূপ দিয়েছেন। ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে এত পাখি গায়’। ঋতুর পালা বদলের পর ধরে প্রকৃতির রংবেরঙের পরিবর্তনে কবি এভাবেই আমাদের সামনে গান কবিতায় চিত্রনাট্যে অপূর্ব এক ক্যানভাস তুলে ধরেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবিগুরুর জীবনের শেষ দিনটি যেমন ছিল
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেরণার আলোকরেখা