ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বলে বিমানবন্দর থানার ওসি মোবারক হোসেন জানান।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। হাদির লাশের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে আসেন তার বড় ভাই আবু বকর। বিমানবন্দরে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো হাদির কফিন বুঝে নিতে উপস্থিত ছিলেন হাদির বোন–জামাই আমিরুল ইসলাম এবং ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে হাদির কফিনবাহী গাড়িটি যখন বেরিয়ে আসে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আগেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়; মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে হাদির লাশ : বিমানবন্দর থেকে হাদির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের হিমঘরে। ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, রাতে এই হিমঘরেই থাকবে হাদির লাশ। শুক্রবার রাতে সেখানেই রাখা হয় কফিন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাদীর মরদেহ এখানে রাখার কথা বলার পর আমরা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।’
জানাযা ও দাফন : ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, ‘পরিবারের দাবির ভিত্তিতে শহীদ ওসমান হাদিকে কবি নজরুলের পাশে সমাহিত করার এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বাদ জোহর জানাজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
শুক্রবার বিমানবন্দর থেকে হাদির কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়ার কথা থাকলেও তার বদলে শনিবার নেওয়া হবে বলে ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজা হবে। এর আগে বেলা আড়াইটায় জানাজার সময় জানানো হয়েছিল। হাদির নামাজে জানাজায় যারা অংশ নিতে আসবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানোও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দেশব্যাপী দোয়া ও আজ রাষ্ট্রীয় শোক : গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বাংলাদেশের সকল মসজিদ এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে ওসমান হাদির আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা হয়। শনিবার হাদির জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সেখানে তার মৃত্যুর খবর আসে।
এদিকে ওসমান হাদিকে গুলিতে জড়িত মূল সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।












