বর্তমান আমাদের সমাজে বেশির ভাগ দম্পতির দুই টি সন্তান। অনেকের আবার দুইটিই কন্যা সন্তান। এক কথায় ছেলে সন্তান নেই। আমার জানা মতে মুসলিম আইনে তবুও একজন কন্যাসন্তান একটি পুত্র সন্তানের সম্পত্তির অর্ধেক অংশ আইনত পায়।কিন্তু হিন্দু আইনে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। হিন্দু সমাজে কোন দম্পতির পুত্র সন্তান না থাকলে সেই কন্যা বা কন্যদ্বয়ের মা বাবা জীবদ্দশায় যদি সম্পূর্ণ সম্পত্তি মেয়ের নামে দলিল বা দানপত্র করে দিয়ে না যান তখনই নানা ধরনের বিপত্তি ও জটিলতা সৃষ্টি হয়। হিন্দু আইনে সেটা তখন মেয়েরা পাবে না বলে বলা হয়। অথবা অন্য আইনে আপনার মেয়েদের ঔরসজাত পুত্রসন্তান থাকলে আপনার সেই সম্পত্তি আপনার দৌহিত্র পাবে।একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এ নিয়ম কন্যাসন্তান কে ঠকানোর অপচেষ্টা বৈ আর কিছু নয়। এ সুযোগে নিজেদের পরিবারের কাকা,জ্যাঠা,ভাই থেকে পাড়াপ্রতিবেশী পর্যন্ত সেই সম্পত্তি ভোগদখলের বা আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে। ঐ ষড়যন্ত্রের যোগসাজশে আরও যুক্ত হয় গ্রাম্যমাতব্বর বা ভূমিদস্যু ও তথাকথিত জমির দালালরা। মেয়েদের কাছে যদি উপযুক্ত দলিল বা সম্পত্তি প্রাপ্তির দানপত্র না থাকে সেক্ষেত্রে তো ঐ অসৎ ব্যক্তিদের পোয়াবারো। তাই আমি বিনীত অনুরোধ করবো যাদের পুত্র সন্তান নেই তারা অবশ্যই জীবিত থাকাকালীন সমস্ত সম্পত্তি মেয়েদের নামে দানপত্র বা রেজিষ্ট্রি দলিল করে দিয়ে দেবেন। যাতে আপনার মৃত্যুর পরে আপনার কন্যা সন্তানদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন ঝামেলা বা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়। আমাদের আর্থ– সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন বিবাহিত বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষে বিভিন্ন আইনী জটিলতা পেরিয়ে বাবা মার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তি নিজের নামে করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই মা – বাবা মেয়ে কে দানপত্র, রেজিষ্ট্রি বা উইল করে দিয়ে গেলে মেয়ে কে খুব বেশি ঝামেলা বা জটিলতায় পড়তে হয়না। অনেক ক্ষেত্রে মা বাবার দেয়া দানপত্র বা দলিল থাকা সত্ত্বেও আপনার লোভী পরিবার পরিজন ও তথাকথিত ভূমিদস্যুরা বার বার তাদেরকে ঠকানো বা অপদস্ত করার উদ্দেশ্য মেয়েদের সম্পত্তি প্রাপ্তির দলিলের পুনঃ পুনঃ প্রমাণ চায় এবং বিভিন্ন কৌশলে কিভাবে আপনার কন্যাসন্তান কে তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করবে তার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়ে উভয়কেই বাবা – মা সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আপনার ছেলে সন্তান না থাকা কোন অপরাধ নয়।এ ব্যাপারে কোন হীনম্মন্যতায় ভোগার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। আপনার অর্জিত সম্পদের সম্পূর্ণ দাবিদার আপনার মেয়েরা।আরও বলতে চাই, আপনার যদি ছেলে সন্তানের পাশাপাশি মেয়ে সন্তান ও থাকে মেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষা ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য তাকেও আপনার অর্থসম্পদের সমান প্রাপ্যতা দিন। রাখুন তো! সমস্ত আইন বা ধর্মীয় বিধি বিধান।
মা বাবা হিসেবে এটা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সামাজিক রীতিনীতি,সংস্কার ও অনেক কুপ্রথা রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। মা–বাবার মৃত্যুর পর অনেক পরিবারে নিজের সহোদর ভাইরাও বোনকে তার ন্যায্য পাওনা টুকু ঠিকভাবে দিতে চায় না। এ ধরনের অনেক ঘটনা আমি চাক্ষুষ দেখেছি। পরিশেষে বিনীত অনুরোধ জানাবো, নিজের জীবদ্দশায় আপনার কষ্টার্জিত অর্থ সম্পদের মেয়েদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে দিন। আপনার মৃত্যুর পরে নিজের অনেক কাছের মানুষের চেহারাও মুহূর্তে বদলে যাবে যা আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। তাই আপনি যে ধর্ম বা সমপ্রদায়ের হোন না কেন নিজের শারীরিক সক্ষমতা থাকা অবস্থায় ও আপনার জীবদ্দশায় কন্যা বা কন্যা সন্তানদের অর্থ সম্পত্তির প্রাপ্তির অধিকার সুনিশ্চিত করবেন।