কেউ কিশোর, কেউ তরুণ। নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে সবাই বেশ জনপ্রিয়। সবারই পরিচিতি তাঁরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরণের গল্প তুলে ধরেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই প্রায় ৪০ জন রোহিঙ্গা ও হোস্ট কমিউনিটির কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে হয়ে গেল ব্যতিক্রমী এক সংলাপ।
আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-১-এর বি-ব্লকে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) সহযোগিতায় ছিল ডয়েচে ভেলে একাডেমি। ‘দ্বীপ্তি ছড়াও বিশ্বময়’ শিরোনামের এই সংলাপে আলোচনা হয় কন্টেন্ট তৈরির নানা কলাকৌশল নিয়ে। এছাড়াও আলাপে উঠে আসে কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে নৈতিক বিবেচনা এবং অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য রোধের বিষয়টিও।
কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সাংবাদিক ইফতেখার ফয়সাল এবং রোহিঙ্গা আলোকচিত্রী ও প্রযোজক মো. ইয়াছিন। সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও ইয়াসমিন আক্তার। সাংবাদিক ইফতেখার ফয়সাল বলেন, ‘নাগরিক সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে গণমানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরতে হবে। যদি সঠিকভাবে এসব কথা তুলে ধরা যায় তবে এসব সমস্যার সমাধানও মিলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গল্প বলার শক্তিই মানুষকে টানে। গল্পটা যদি ঠিকভাবে বলা যায়, মানুষ শেষ পর্যন্ত শুনবে। কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা চাইলে নিজের সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে।” কন্টেন্টের জন্য ভালো গল্প, ভালো উপস্থাপনা আর সঠিক তথ্য এই তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ইফতেখার। তাঁর পরামর্শ, “যাদের জন্য কন্টেন্ট বানাচ্ছি, তাদের মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।”
অন্যদিকে নিজের যাত্রার গল্প শোনান ইয়াসিন। বালুখালির মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থেকেও তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে। তাঁর বিশ্বাস নিজের কমিউনিটির গল্পই সবচেয়ে শক্তিশালী। “যেটা সত্য সেটাকেই তুলে ধরতে হবে। জাত–ধর্ম ভেদাভেদ করে নয়। ভালো সাংবাদিক হতে হলে সাহসিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। আগে নিজের গল্প বলা শুরু কর, ধীরে ধীরে পথ তৈরি হবে।”
সংলাপ শেষে বাংলাদেশি তরুণ মোহাম্মদ ফয়সালও জানান নিজের অভিজ্ঞতার কথা। শখের বসে ভিডিও বানানো শুরু করলেও এই সংলাপে এসে তিনি শিখেছেন ভিডিও নির্মাণের শেকড় ও নৈতিকতা। তাঁর ভাষায়, এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে তাঁর কনটেন্টকে আরও সমৃদ্ধ করবে। ক্যাম্প ওয়ান ইস্টের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ রিদোয়ান। হাতে একটি মোবাইল ফোন আর মনে অদম্য ইচ্ছে নিয়ে তিনি চালান একটি ফেসবুক পেজ। সেখানে তুলে ধরেন নিজের কমিউনিটির মানুষের জীবন আর সংগ্রামের কথা। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘আমি চাই গল্পের মাধ্যমে আমাদের জীবনটা দেখাতে। যেন সারা বিশ্ব জানে আমরা কেমন করে বাঁচি।’
আলোচনার পুরো সময়জুড়ে তরুণদের চোখে ছিল নিজেদের গল্প নিজেই বলার আকাঙ্ক্ষা। কমিউনিটি কমিউনিকেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিহাব জিশান বলেন, ‘গল্প যখন নিজের, তখন সে গল্প সবচেয়ে সত্য এবং সবচেয়ে শক্তিশালী। এজন্যই আমরা দুই কমিউনিটির তরুণদের নিয়ে এমন একটি আয়োজন করেছি। এটি শুধু একটি আয়োজন নয়। বরং দুই কমিউনিটির তরুণদের পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান এবং সহযোগিতা গড়ার একটি প্ল্যাটফর্ম। গল্প বলার মধ্য দিয়ে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের পরিচয়, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের পথরেখা। পুরো বছরজুড়ে এধরণের মোট দশটি সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।’












