কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি

বেসরকারি আইসিডিতে সব পণ্য খালাসের সিদ্ধান্তের প্রভাব

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে সব ধরনের পণ্যবাহী কন্টেনার বেসরকারি আইসিডি থেকে খালাসের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে গতি এসেছে। বন্দর থেকে কন্টেনার খালাসে এ ধরনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। দুদিনে দুই হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার আইসিডিতে স্থানান্তর করার পরও বন্দর অভ্যন্তরে কন্টেনারের পাহাড় তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি আইসিডিতে কন্টেনার সরানো না হলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ত।
সূত্র জানায়, বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শতভাগ রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যই এসব আইসিডিতে স্টাফিং থেকে শুরু করে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। নির্দিষ্ট জাহাজটি বন্দরে বার্থিং নেয়া হলে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার আইসিডি থেকে হুক পয়েন্টে পৌঁছে দেয়া হয়।
রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি আমদানি পণ্যের কন্টেনারও আইসিডিগুলোতে হ্যান্ডলিং করা হয়। তবে বন্দর থেকে চাল ডাল তুলাসহ ৩৭ ধরনের পণ্যবাহী কন্টেনার আইসিডি থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়। কিন্তু গত দুইদিন ধরে ৩৭ ধরনের স্থলে সব ধরনের পণ্য আইসিডি থেকে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। বন্দরের পাশাপাশি আইসিডি থেকেও সব ধরনের আমদানি পণ্য খালাসের সিদ্ধান্তের সুফল মিলতে শুরু করেছে।
আইসিডি’র পাশাপাশি বন্দর থেকেও কন্টেনার খালাস হয়েছে। এতে কন্টেনার খালাস কার্যক্রমে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। প্রথম দুইদিনে কিছুটা কম খালাস হলেও আগামী এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ হাজার টিইইউএস আমদানি পণ্যের কন্টেনার আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। গতকাল বন্দরে কন্টেনার ছিল ৪৩ হাজার ১৮টিইইউএস। বেসরকারি আইসিডিতে দুই হাজারেরও বেশি কন্টেনার সরিয়ে নেয়ার পরও বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, বেসরকারি আইসিডিতে কন্টেনার নেয়া শুরু হয়েছে। সব ধরনের পণ্যবাহী কন্টেনার স্ক্যানিং করে আইসিডিতে পাঠানো হচ্ছে। এতে বন্দরের সার্বিক অপারেশনাল কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস এসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, কন্টেনার আনা শুরু করেছি। শতভাগ আমদানি পণ্যবাহী কন্টেনার আইসিডিতে আনা হচ্ছে। প্রথম দিনই ১২৯১ টিইইউএস কন্টেনার আইসিডিতে নেয়া হয়েছে। গতকাল কন্টেনার পরিবহন কাজে বাড়তি গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। তিনি বন্দরের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। বন্দরকে বড় সংকট থেকে রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, দুনিয়ার কোন উন্নত বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার খুলে পণ্য আনস্টাফিং করে পার্টিকে দেয়ার নজির নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে তা করা হয়। এতে বাড়তি সংকট চট্টগ্রাম বন্দরকে মোকাবেলা করতে হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দর থেকে অন্তত ১৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বের করা হলে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজ থেকে নামানো হয়। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৩০০ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজীকরণ হয়।
আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো ডেলিভারি না হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্দর ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ফুরিয়ে যাওয়ার শংকা তৈরি হয়। কোরবানির ঈদ পরবর্তী সার্বিক অবস্থার পাশাপাশি লকডাউনে বন্দর ইয়ার্ড থেকে কন্টেনার খালাসে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ অবস্থায় ইয়ার্ডের কন্টেনার আইসিডিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বন্দরকে বড় সংকট থেকে রক্ষা করেছে বলে সূত্র জানায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝড়ে ডুবল ছয় ট্রলার ৫ জেলে নিখোঁজ
পরবর্তী নিবন্ধটিকাদান বাড়বে লকডাউন চলবে