চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অবস্থান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পাশাপাশি কন্টেনার, কার্গো এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি–অক্টোবর) ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেনার, ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২শ’ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪.৮৭ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১২.৬৪ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১০.৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। উক্ত সময়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস কন্টেনার, ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ টন কার্গো এবং ৩৫১ টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট সাধারণ পণ্য আমদানি–রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশ এবং কন্টেনার পরিবাহী পণ্যের আমদানি–রপ্তানির প্রায় ৯৮ শতাংশই হ্যান্ডলিং হয়।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই–অক্টোবর) ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কন্টেনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ টন কার্গো এবং ১ হাজার ৪২২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০.১৫ শতাংশ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১৫.৭৬ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। উক্ত সময়ে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৮৮ টিইইউএস কন্টেনার, ৬১লাখ ৬৬ হাজার ৪০৫ টন কার্গো এবং ১৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
অপরদিকে চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) চলতি ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই–অক্টোবর) ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কন্টেনার এবং ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৫.৫০ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১৯.৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। উক্ত সময়ে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ হাজার ৯১৯ টিইইউএস কন্টেনার এবং ৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৯ দিন, অক্টোবর মাসে ১৮ দিন এবং নভেম্বর মাসে ১৯ দিন জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্য ছিল। বর্তমানে বন্দরে আগত জাহাজ অনঅ্যারাইভাল বার্থিং পাচ্ছে। অর্থাৎ পণ্য নিয়ে বিদেশি বন্দর থেকে আসা জাহাজ বহিনোঙরে অবস্থান না করেই সরাসরি জেটিতে বার্থিং নিচ্ছে। এতে আমদানি–রপ্তানিকারকগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত মালামাল ডেলিভারি এবং রপ্তানিতব্য মালামাল যথাসময়ে জাহাজীকরণ করতে পারছেন। যার সার্বিক প্রভাবে পোর্ট লিড টাইম কমেছে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, যা সামগ্রিক রপ্তানিতে গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তিনি জানান, অত্যাধুনিক কার্গো এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি সমপ্রসারণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সর্বোপরি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা–কর্মচারী, শ্রমিকগণের নিরলস পরিশ্রম ও বিভিন্ন পর্যায়ের বন্দর ব্যবহারকারীগণের অব্যাহত সহযোগিতার কারণে বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য সমপ্রতি মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর থেকে চট্টগ্রাম আগমন করেন। বন্দর ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বিশেষত জাহাজের অপেক্ষার সময় কমানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের অপারেশনাল পারফরম্যান্সের উন্নতি ও সেবার মানের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে গভীর সন্তোষ প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বন্দরের এমন সাফল্য দেশবাসীর কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল করবে ও ভবিষ্যতে বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের উন্মোচিত হবে বলেও বন্দর সচিব উল্লেখ করেন।












